বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ইয়েমেনে সাত মাস বাংলাদেশিকে জিম্মি আল-কায়দার

জাতিসংঘ কর্মকর্তার মুক্তির আকুতি

সাখাওয়াত কাওসার

জাতিসংঘ কর্মকর্তার মুক্তির আকুতি

সুফিউল আনাম

সাত মাসেও খোঁজ মেলেনি ইয়েমেনে কর্মরত জাতিসংঘের নিরাপত্তা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম সুফিউল আনামের। চরম উৎকণ্ঠা আর উদ্বিগ্নতার মধ্যে সময় পার করছেন অপহৃতের পরিবারের সদস্যরা। সুফিউলকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করলেও গতকাল পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি। গত শনিবার সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে লে. কর্নেল (অব.) সুফিউল আনামের মুক্তির আকুতি অনেকেরই হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। অন্যদিকে অনেক পরিকল্পনা থাকলেও সাড়ে তিন বছরের একমাত্র নাতি শেহরান আনাম দাদা সুফিউলকে ছাড়াই আজ প্রথমবারের মতো স্কুলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অপহৃতের স্ত্রী কাজী     নাসরীন আনাম। ১১ ফেব্রুয়ারি ইয়েমেনের আবিয়ান প্রদেশ থেকে সুফিউলসহ জাতিসংঘের পাঁচ কর্মী অপহৃত হন। তিনি ছাড়া অন্যরা ইয়েমেনের নাগরিক। চতুর্থ বিএমএর এ কর্মকর্তা ২০০৫ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে অবসরে যান। এর পর থেকেই জাতিসংঘে নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন এই বাংলাদেশি নাগরিক। অপহরণের কিছুদিন পরই ৩ মার্চ স্বামীকে উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করে চিঠি লিখেছেন অপহৃতের স্ত্রী কাজী নাসরীন আনাম। চিঠিতে তিনি তার পরিবারের অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে প্রতিক্রিয়ায় সেনা কর্মকর্তা সুফিউলের স্ত্রী কাজী নাসরীন আনাম বলেন, ‘আমাদের পরিবার থেকে আনন্দ-হাসি উধাও হয়ে গেছে। কীভাবে প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে তা বলে বোঝাতে পারব না। দেশে আর একা থাকতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়েই ছেলেমেয়ের কাছে কানাডায় চলে এসেছি। তবে দাদার হাত ধরে নাতি স্কুলে যাবে এমন অনেক পরিকল্পনা ছিল আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর কোর্সমেটরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে অনেক সিরিয়াস ছিলেন। তবে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া পাওয়া যায়নি।’ তবে জাতিসংঘ সদর দফতর তাদের খোঁজখবর রাখছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করেন এমন একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তারা প্রকাশিত ভিডিওটি দেখেছেন। আল কায়েদা আরব পেনিনসুলা (একিউএপি) নামে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী এ অপহরণের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা মুক্তিপণ হিসেবে কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করেছে। পাশাপাশি ইয়েমেনে জেলে আটক তাদের কিছু সদস্যকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের হয়ে ইয়েমেন সরকার অপহরণকারীদের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘে স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তাদের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্ব রাখে। একাধিক সাবেক কূটনীতিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে দেশের নাগরিক অপহৃত হয়েছে, মুক্তির বিষয়ে সে দেশকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হয়। বাংলাদেশ সরকার ইয়েমেন ছাড়াও কাতার, কুয়েত, সৌদি আরবের মতো বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।

ভিডিওতে যা বলেছেন : ভিডিওতে সুফিউল জানিয়েছেন, তাকে অপহরণ করেছে জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা। মুক্তির জন্য আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছয় মাস ধরে আমি কোথায় আটক আছি জানি না। আমার পরিবারও জানে না আমি কোথায় আছি। আমি যদি মারা যাই, আমার পরিবার জানতে পারবে না। আমি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও আর্থ্রাইটিসের মতো জটিল সব রোগে ভুগছি। আমার জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।’

সুফিউল জানান, সেখানে তার অন্য সহকর্মীরাও আটক রয়েছেন। ভিডিওটি ৯ আগস্ট ধারণ করা। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়ে এ বাংলাদেশি বলেন, ‘আপনারা এগিয়ে আসুন এবং অপহরণকারীদের দাবিগুলো মেনে নিন।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি দাবিগুলো মেনে নেন, তাহলে আজই আমাদের মুক্তি সম্ভব। তা না হলে আমাদের মরদেহগুলো গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেনে যুদ্ধ চলছে। সে সময় রাজধানী সানা আক্রমণ করে আবদ-রাব্বু মানসুর হাদি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে হুতি বিদ্রোহীরা। পরে ২০১৫ সালের মার্চে হাদি সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে দেশটিতে হস্তক্ষেপ করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত জোট।

 

 

সর্বশেষ খবর