সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পেশাদার কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, সব মিলিয়ে বলা যায়, আনুষ্ঠানিকতার দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফর বেশ ভালো। আর ফলাফলের দিক থেকে মোটামুটি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এ কথা বলেন। হুমায়ুন কবির বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দেখা করেছেন। কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিতার বিষয়গুলো এই সফরে সম্পন্ন হয়েছে। যাকে মোটামুটি ভালোই বলা যায়। আর বিষয়বস্তুর দিক থেকে কিছু কিছু অগ্রগতি এবং ইতিবাচক দিক আমরা দেখছি। দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক এবং ভারতের জুডিশিয়াল একাডেমি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারকসহ অন্যান্য সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে এবং কাজে লাগলে আমরা উপকৃত হব। তিনি বলেন, এই সফরে তিস্তা নিয়েও আমাদের আশা ছিল। কিন্তু এখানে শেখ হাসিনার আশা ব্যক্ত করা ছাড়া আর কিছু দেখিনি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ সব অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। কিন্তু এটি আশার মধ্যেই রয়ে গেল। এ ছাড়া সীমান্তে আমাদের যেসব জটিলতা আছে যেমন সীমান্ত হত্যাসহ অন্যান্য সমস্যাগুলোর ব্যাপারেও কোনো প্রতিশ্রুতি দেখিনি। হুমায়ুন কবির বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বছর পর ভারত সফরে গেলেন, সে জায়গায় আরও কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়া গেলে আমার মনে হয় সফরটিকে ভবিষ্যৎমুখী বলা যেত। গত ২০১০ সালের সফরটি বেশ ভবিষ্যৎমুখী ছিল। সেজন্যই আজ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি সাবলীল জায়গায় এসেছে। যেহেতু আমরা দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করেছি, এজন্য আমাদের প্রত্যাশাও আরেকটি ধাপে ছিল। সে জায়গায় যেতে হলে আমাদের হয়তো আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক যাতে আরও ঘনিষ্ঠ হয়। বিশেষ করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৫ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে চললে দুই দেশই উপকৃত হবে বলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কটি একটি রোল মডেল। তিনি একই সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জানতে পেরেছি সেখানে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সেপা) নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আর এগুলোকে আমি এই সফরের অর্জন হিসেবেই দেখছি। তিনি বলেন, সেপা নিয়ে ভারত থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা এলে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে- এমনটা আমাদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কিছু শুনিনি। এ ব্যাপারে আমরা এখনো কাছাকাছি অবস্থানেও যেতে পারিনি।