বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মুজিব বৃত্তি ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে এবং গত এক দশকে তা আরও জোরদার হয়েছে। গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পর উভয় দেশই ক্রমবর্ধমান বিস্তৃত সেক্টরাল সহযোগিতায় কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে তাঁর অবস্থানকালীন হোটেলের বলরুমে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈনিক বা কর্মকর্তাদের সরাসরি বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ও ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান মুক্তিযোদ্ধা ভি কে সিং। সামুদ্রিক ও স্থল সীমানা নির্ধারণের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান সেই প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পর্কটি বিশ্বব্যাপী ‘প্রতিবেশী কূটনীতির জন্য রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত।

তিনি বলেন, ‘২০০টি মুজিব স্কলারশিপ, দশম শ্রেণিতে ১০০টি এবং দ্বাদশ শ্রেণির স্তরে ১০০টি- যুদ্ধের ভারতীয় প্রবীণ সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাদের বংশধরদের জন্য আমাদের এই শুভেচ্ছা উপহার, যারা আমাদের জন্য ১৯৭১ সালে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ভারতীয় ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অমূল্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং রক্ত দিয়েছেন। যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের স্মরণ করা আমাদের জন্য সর্বদা গর্বের বিষয়। আপনাদের আমার অভিবাদন, হে সাহসী হৃদয়, আমাদের বীরদের!’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের মহান পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী, তাই তরুণ প্রজন্মকে সেই ঐতিহাসিক অতীতের সঙ্গে পুনরায় সংযুক্ত করার জন্য আমাদের এই বিনীত প্রচেষ্টা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে বৃত্তিপ্রাপ্তরা তাদের পূর্বপুরুষদের বীরত্বের স্মৃতি পুনরায় ঘুরে দেখার, বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত বন্ধুত্বের পথ অতিক্রম করছে।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘২০২১ আমাদের সম্পর্কের একটি যুগান্তকারী বছর ছিল। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী।’ প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন যে ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আমাদের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে যোগ দিয়েছিলেন’। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধন ৫০ বছর আগে রক্তে রচিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অনেক এগিয়েছে। জয়শঙ্কর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক সমসাময়িকতার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ গতিপথকে মাথায় রেখে অগ্রসর হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘যে কোনো সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর নির্ভর গড়ে ওঠে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ৫০ বছর আগে রক্তে রচিত বন্ধনের ধারাবাহিকতা। আজ আমরা সেই সময়টিকে স্মরণ করি, ঐতিহাসিক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি প্রতীকী সম্মান জানাই। একজন রাষ্ট্রনায়ক, যিনি বীর, জনগণের চেতনাকে নিপীড়ন থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং একটি সাহসী জাতি গঠন করেছিলেন।’ তিনি বলেন, ভারতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন আইকনিক ব্যক্তিত্ব। সাহসী ও দৃঢ়প্রত্যয়ের একজন মানুষ।

প্রধানমন্ত্রী মোদির মন্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ‘উভয় দেশই তাঁর ওপর একটি বায়োপিক তৈরি করেছে, যা প্রায় শেষের দিকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এখনো আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।’

 

 

সর্বশেষ খবর