শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আজমির শরিফে দোয়া ও নামাজ শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের শেষ দিন ভারতের রাজস্থানের জয়পুরে আজমির শরিফ সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সেখানে তিনি সুফিসাধক খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে নফল নামাজ ও মোনাজাতের মাধ্যমে দেশ, জনগণ ও মুসলিম উম্মাহর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন। পরে ভারতের জয়পুর রাজ্যের বিমানবন্দর থেকে গতকাল রাতে সরাসরি ঢাকা ফেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহন করা বিমানের বিশেষ ফ্লাইট। সোমবার নয়াদিল্লিতে নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারত ও নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ভারত সফর শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট গতকাল সকালে নয়াদিল্লির বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে বেলা ১০টায় রাজস্থানের জয়পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বিডি কাল্লাসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। পরে প্রধানমন্ত্রী যান সুফিসাধক খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগায়। দরগায় লালগালিচায় স্বাগত জানানো হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে। এরপর মাজার জিয়ারত করেন তিনি। নিরাপত্তার স্বার্থে দরগায় অন্য কোনো ভক্তকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সেখানকার বাজারও বন্ধ রাখা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেখানে নফল নামাজ ও মোনাজাতের মাধ্যমে দেশ, জনগণ ও মুসলিম উম্মাহর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছু সময় থাকেন। এ সময় তিনি ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। এরপর শেখ হাসিনা আজমির শরিফ প্রদক্ষিণ করেন। পরে আজমিরের সার্কিট হাউসে কিছু সময় বিশ্রাম শেষে জয়পুর বিমানবন্দরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জয়পুর বিমানবন্দরে স্থানীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদায় জানান। রাত ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিশেষ ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভারত সফরের প্রথম দিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর মৌর্য্য হোটেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সুইটের সম্মেলন কক্ষে তার সঙ্গে দেখা করেন। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের সফরে শেখ হাসিনা হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠক করেন। নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তাকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর অভিন্ন সীমান্ত নদী কুশিয়ারা থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারসহ নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দুই প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের যৌথ উদ্যোগের বেশ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে খুলনার রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।

পরে যৌথ বিবৃতিতে ভারত বাংলাদেশি পণ্য তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানির জন্য ফ্রি ট্রানজিটের প্রস্তাব দেয়। শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। একই দিন শেখ হাসিনা তার সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেন। তিনি ওই দিন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। একই দিন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।

সর্বশেষ খবর