তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান আর নেই। গতকাল রাত ১০টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। এর আগে বাড়িতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, হার্টঅ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। আকবর আলি খানের ছোট ভাই কবীরউদ্দিন খান গণমাধ্যমকে বলেন, আজ বাদ জুমা গুলশানের আজাদ মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে মিরপুর বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। কর্মজীবনে সরকারের সচিব হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি ছিলেন একাধারে অর্থনীতিবিদ, বাগ্মী, গবেষক ও লেখক। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, সাহিত্যসহ বিচিত্র বিষয়ে তার গবেষণামূলক বই পাঠকের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তার ‘হিস্টোরি অব বাংলাদেশ’ বা ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ বইটি খুব বিখ্যাত। তার জনপ্রিয় প্রকাশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পরার্থপরতার অর্থনীতি, আজব ও জবর আজব অর্থনীতি, অবাক বাংলাদেশ : বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি, বাংলায় ইসলাম প্রচারে সাফল্য : একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ, দুর্ভাবনা ও ভাবনা : রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ইত্যাদি। আকবর আলি খানের সর্বশেষ আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘পুরানো সেই দিনের কথা’। এই গ্রন্থে একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের জীবনের উন্মেষ ও বিকাশের কাহিনি উঠে এসেছে। আকবর আলি খান কর্মজীবনে সরকারের সাবেক সচিব হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সরকারের রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬৭-৬৮ সালে লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করেন। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করে। স্বাধীন দেশে তিনি আবার সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন। অবশ্য পরে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে না এমন আশঙ্কায় তিনজন উপদেষ্টার সঙ্গে একযোগে পদত্যাগ করেন আকবর আলি খান। বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পরে কানাডর কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ এবং পিএইচডি করেন।