বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ গর্জে উঠেছে, আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এ আন্দোলনে আমাদের বিজয় নিশ্চিত। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিশোধ একটাই- গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। এই মুহূর্তে সরকারকে পদত্যাগ করানো। ভোলায় আবদুর রহিম প্রাণ দিতে দ্বিধা করেনি। আমরাও কেউ প্রাণ দিতে দ্বিধা করব না। প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো বেআইনি আদেশ মানবেন না। কথায় কথায় গুলি চালাবেন না। জনগণকে প্রতিপক্ষ বানালে এর পরিণতি শুভ হবে না। গতকাল বিকালে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেটের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, তানভির হুদা, রফিকুল আলম মজনু, এস এম জাহাঙ্গীর, চৌধুরী নায়েবা ইউসুফ, কফিল উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, আতাউর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, আলী আকবর আলী, কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন দিলু, নাজিম উদ্দীন দেওয়ানসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে ভোলায় নুরে আলম, আবদুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধান হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশ হয়। উত্তরার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে এ সমাবেশে অংশ নেন।  মির্জা ফখরুল বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে এ সরকার গুম-খুন করে জনগণকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। আবার একটা নির্বাচন আসছে, এটা নিয়ে পাঁয়তারা করছে। ইভিএম দিয়ে তারা নির্বাচন করতে চায়। পরিষ্কার করে বলছি, এ আওয়ামী লীগ থাকলে, হাসিনা সরকার থাকলে, এদেশে নির্বাচন হবে না। এ মুহূর্তে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।   বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৫ বছরে এ সরকার সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের লোকজন বিদেশে পাচার করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছে। এটা জাতির জন্য লজ্জার। অথচ এ সরকারের লজ্জা হয় না, তারা এ নিয়ে লাফালাফি করে। পার্লামেন্ট আছে- যেটাকে আমরা রাবার স্টাম্প পার্লামেন্ট বলি। সংসদে জনগণের বিষয় নিয়ে কথা হয় না, একজনকে নিয়ে শুধুমাত্র তোষামোদি হয়। বিচার বিভাগে মানুষ বিচার পায় না। অন্যায়ভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে। কারণ খালেদা জিয়াকে এ সরকার ভয় পায়। খালেদা জিয়া রাস্তায় নামলে হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার মতো লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে আসবে।  বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সরকার অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। রিজার্ভ নিয়ে সরকার বেশ লাফালাফি করেছিল। রিজার্ভ কমতে কমতে তলানিতে নেমে এসেছে। যা আর তিন মাসও চলবে না। ব্যাংক খালি করে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ ব্যাংককে এখন নিরাপদ বোধ করছে না। বিদেশি বিনিয়োগ নেই।    মির্জা ফখরুল প্রশ্ন রেখে বলেন, নারায়ণগঞ্জের পুলিশের কাছে চাইনিজ রাইফেল কীভাবে গেল? এটার ব্যাখ্যা আমরা এখনো পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে পাইনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পাইনি। কথায় কথায় গুলি করবেন না বেআইনি নির্দেশ নিয়ে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না। মনে রাখবেন, জনগণ থেকেই আপনারা এসেছেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন চলে, সংসার চলে। সুতরাং জনগণকে সম্মান করুন। ওই যেমন আজকে র‌্যাবের ওপরে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) এসেছে। আইন না মেনে মানবাধিকার লংঘন করলে র‌্যাবের মতো যে কোনো বাহিনীর ওপর স্যাংশন আসতে পারে বলেও সতর্ক করেন মির্জা ফখরুল।

শোক বইয়ে স্বাক্ষর ও শোক বাণী হস্তান্তর : ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেছেন ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শোক বাণী পৌঁছে দেন। গতকাল দুপুরে ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন কার্যালয়ে গিয়ে তিনি এ স্বাক্ষর করেন। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।