সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চলে গেলেন সাজেদা চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন সাজেদা চৌধুরী

আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারি বর্ষীয়ান রাজনীতিক, সংসদ উপনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আর নেই। গতকাল মধ্যরাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পৃথক শোকবাণীতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এক সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। সাজেদা চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা নিয়ে আগস্টের শেষের দিকে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি হন তিনি। সেখানেই গতকাল মধ্যরাতে মৃত্যু হয় বলে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ জানিয়েছেন। সাজেদা চৌধুরীর ছেলে সাহাব আকবর চৌধুরী লাবু গণমাধ্যমকে জানান, রাত ১১টা ৪০ মিনিটে মা মারা গেছেন। পরে জানানো হয়, আজ বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাজেদা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ জোহর তাঁর নির্বাচনী এলাকা নগরকান্দায় হবে দ্বিতীয় জানাজা। বাদ আসর রাজধানীর বনানী কবর স্থানে দাফন করা হবে সাজেদা চৌধুরীকে। এসব তথ্য জানান সাজেদা চৌধুরীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ রায়হান। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জননী সাজেদা চৌধুরীর স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী ২০১৫ সালে মারা যান। সাজেদা চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৫ সালের ৮ মে। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। সাজেদা তরুণ বয়সেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সাজেদা চৌধুরী, তখন কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে বাংলাদেশ গার্লস গাইডের ন্যাশনাল কমিশনারও ছিলেন তিনি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাজেদা। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফেরার পর তাঁর সঙ্গেও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯২ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীতে ছিলেন। ফরিদপুর-২ আসন থেকে তিনি কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদেও তিনি নির্বাচিত হন। এরপর বারবার তিনি ওই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা সংসদ উপনেতার পদে ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাজেদা চৌধুরী। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও শেখ হাসিনা তাঁকে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১০ সালে সাজেদা চৌধুরী স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর