মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভালোবাসা শ্রদ্ধায় চিরনিদ্রায় শায়িত সাজেদা চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভালোবাসা শ্রদ্ধায় চিরনিদ্রায় শায়িত সাজেদা চৌধুরী

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গতকাল সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে শ্রদ্ধা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। গতকাল বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বনানী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। এর আগে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। রবিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। গতকাল বেলা সোয়া ১১টায় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ফরিদপুরের নগরকান্দা এমএন একাডেমি প্রাঙ্গণে। সকালে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে তাঁর লাশ বেলা পৌনে ১১টার নগরকান্দায় পৌঁছায়। জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে তাঁর লাশ নিয়ে নেতা-কর্মী ও পরিবারের সদস্যরা ঢাকার পথে রওনা হন। বেলা আড়াইটায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরহুমার লাশ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অস্থায়ী বেদিতে রাখা হয়।

জাতীয় সংসদের উপনেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর লাশ গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ এসজিপি, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান       -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনতার ঢল : দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের কান্ডারি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে হাজারো মানুষের ঢল নামে। আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান রাজনীতিককে শেষবিদায় জানাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ ফুল হাতে জড়ো হন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কফিনে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সালাহউদ্দিন ইসলাম ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্মান প্রদর্শন করেন সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহমদ। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাঁরা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যক্তি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বিএসএমএমইউর উপাচার্য ড. শারফুদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণী প্রমুখ মরহুমার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এ ছাড়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে জাসদ, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, যুব মৈত্রী, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, মহিলা আওয়ামী লীগ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি, ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলা আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশ জাদুঘর, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি, জাতীয় শ্রমিক লীগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সংগীত ভবন, বাংলাদেশে গার্লস গাইডসহ বিভিন্ন সংগঠন।

বিকাল ৪টায় সাজেদা চৌধুরীর মরদেহ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা মরহুমার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধ জানান।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম চত্বরে জানাজা : জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম চত্বরে গতকাল বাদ আসর সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত  হয়। এতে অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টুসহ নেতৃবৃন্দ। এ সময় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী বলেন, ‘আমার আম্মা দেশের জন্য ও আওয়ামী লীগের জন্য আজীবন কাজ করেছেন। তিনি সব সময় দেশের মানুষের কথা ভাবতেন। আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।’ এর আগে নির্বচনী আসন ফরিদপুর-২-এর সংসদ সদস্য হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার এমএন একাডেমি মাঠে। এতে দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।

বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের শোক : জাতীয় সংসদের উপনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো শোকবার্তায় বাজুস প্রেসিডেন্ট বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা-পরবর্তী অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ, গ্রামীণ উন্নয়ন, শিক্ষা ও নারী পুনর্বাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর অবদান জাতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ হারিয়েছে। বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুমা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। বাজুস প্রেসিডেন্ট তাঁর শোকবার্তায় আরও উল্লেখ্য করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর সংকটময় মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পৃথক বাণীতে শোক প্রকাশ করেছেন।

চোখের জলে বিদায়, এলাকায় মাতম

সর্বশেষ খবর