মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি রক্ষায় সহায়তা দিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি রক্ষায় সহায়তা দিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তি রক্ষায় তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশ সর্বদা বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে সহায়তা দিয়ে যাবে। তিনি বলেন, এটা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা যে, বাংলাদেশ সর্বদা বৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে। জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বশান্তি রক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সেনাবাহিনী প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা এটি বজায় রাখতে চাই। গতকাল রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে ৪৬তম ইন্দো-প্যাসিফিক আর্মিজ ম্যানেজমেন্ট সেমিনার (আইপিএএমএস)-২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসস।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছে। ২৭টি দেশ এতে অংশ নিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি সহায়তা কার্যক্রমে মহান অবদানের জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ মিশনে এবং বিশ্বের যে কোনো স্থানে দেশ ও বিশ্বশান্তির জন্য সর্বদা প্রস্তুত। যে কোনো সংঘাত বা সংকট বিশ্বের প্রতিটি জাতিকে প্রভাবিত করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল উন্নয়নকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করে। তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিশ্বনেতাদের সৎ ও শান্তিপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা বিশ্বের প্রায় সব দেশের প্রধান নীতিগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সহযোগিতার দিকে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এটি যোগাযোগ, সংলাপ এবং শীর্ষ সম্মেলনের মতো বেসামরিক এবং সামরিক কূটনৈতিক চ্যানেলের পথও প্রশস্ত করেছে।

তিনি বলেন, এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আইপিএএমএস একটি বহুজাতিক প্ল্যাটফরম ‘বন্ধুত্ব এবং উষ্ণতার অনুভূতি’ তৈরি করতে পারে। তিনি বাংলাদেশে এই সেমিনারে যোগদানের জন্য সব অংশগ্রহণকারী দেশকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। কারণ আমরা শান্তির সুবিধাগুলোতে বিশ্বাস করি এবং আমাদের জনগণের শক্তির দিকে মনোনিবেশ করেছি। বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের নিজেদের দুর্দশা ছাড়াও দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

সংঘবদ্ধ বহুজাতিক অপরাধ দমনে সহযোগিতার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে সাইবার অপরাধ এবং সংঘবদ্ধ বহুজাতিক অপরাধের কারণে সৃষ্ট মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড রোধে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল গণভবন থেকে নগরীর একটি হোটেলে পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ আয়োজিত ১১তম বার্ষিক ইন্টারপা সম্মেলন ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সহিংস চরমপন্থা এবং প্রযুক্তিভিত্তিক বহুজাতিক অপরাধ দমনে চাহিদা ও ফলাফলভিত্তিক প্ল্যাটফরম প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা ইন্টারপা সম্মেলনের উদ্বোধনে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এই সম্মেলনের আয়োজক হতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আকতার হোসেন, ইন্টারপার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইলমাজ কোলাক এবং পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ও অধিবেশনের সভাপতি ড. বেনজীর আহমেদ বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও অর্থ পাচারের পাশাপাশি সহিংস চরমপন্থা এবং প্রযুক্তিনির্ভর অন্যান্য অপরাধ দমনে পুলিশের ডিজিটালাইজেশন একটি চমৎকার উপায় হতে পারে। বর্তমানে এসব অপরাধের কারণে বিশ্বজুড়ে পুলিশের দায়িত্ব পালনে তীব্র চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। আজকের বিশ্বে একা কোনো দেশের পক্ষে এসব মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই এসব সমস্যা মোকাবিলায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সুসংহত করার কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সম্মেলনের মূল থিম ‘ডিজিটালাইজেশন অব পুলিশিং’ প্রকৃত অর্থেই সময়োপযোগী হয়েছে। বিশ্বায়নের এই যুগে সহিংস চরমপন্থা এবং আন্তসংঘটিত অপরাধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সীমানা সামান্যই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ফলে সারা বিশ্বে এর সুদূরপ্রসারী অস্থিতিশীল প্রভাব পড়ছে। নতুন চ্যালেঞ্জসমূহ সাইবার অপরাধ, মুদ্রা পাচার, মুদ্রা জাল, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং অন্যান্য আধুনিক হুমকিরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, মহাদেশজুড়ে পুলিশ সদস্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পেশাদারদের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারপার এই অনন্য সম্মেলন অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন পথ খুলে দেবে। বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা সফলভাবে মোকাবিলায় তাদের সক্ষমতা ও সহিষ্ণুতা প্রমাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষতা, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি এবং সমন্বয় বিশ্বজুড়ে সহিংস চরমপন্থা এবং উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক বহুজাতিক অপরাধ দমনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

 

সর্বশেষ খবর