মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

এমপি লিটন খুনের পর পালিয়ে মাদক চোরাচালানে চন্দন

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন খুনের নেপথ্যে ছিল অনেক দিনের জমে থাকা ক্ষোভ, রাজনৈতিক বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার। এ ঘটনায় করা মামলায় সাত আসামির মধ্যে চন্দন ছিলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহদফতর সম্পাদক।

নানা অনিয়ম, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ, নারী নির্যাতন মামলার কারণে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর থেকেই এমপি লিটনকে খুনে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন চন্দন।

রবিবার রাতে সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকা থেকে এমপি লিটন হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি চন্দনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টও জারি ছিল। তিনি পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে সীমান্ত দিয়ে মাদকের চালান বাংলাদেশে পাঠাতেন। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে  র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, আবদুল কাদের খানের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। আবদুল কাদের খান নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নির্বাচিত এমপি ছিলেন। এমপি থাকাকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার দুর্নীতির বিষয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন অভিযোগ উত্থাপন করেন। পরে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ আসন থেকে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এমপি নির্বাচিত হন। পুনরায় এমপি হওয়ার লোভে মূলত এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন আবদুল কাদের খান। ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে এমপি লিটনকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে চন্দন কুমার রায়কে জানান আবদুল কাদের খান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিহত লিটনের ছোট বোন বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এই এমপির হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তখন দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কারী চন্দন কুমার রায় ছাড়া বাকি সাতজনই গ্রেফতার হন। পরে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর বিচার কার্যক্রম শেষে গ্রেফতার ছয়জন এবং পলাতক আসামি চন্দনসহ সাতজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। অপর আসামি সুবল চন্দ্র কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে চন্দন ১৯ দিন কারা ভোগ করেন। তার বিরুদ্ধে থাকা চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ অন্যান্য মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে তিনি এমপি লিটনের সহযোগিতা চান। কিন্তু এমপি লিটন তাকে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলায় তিনি লিটনের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। পরে বিভিন্ন অভিযোগে ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে এমপি লিটন তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেন। এরপর আবদুল কাদের খানের পিএস ও এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী শামসুজ্জোহার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে আবদুল কাদের খান ও তার মধ্যে সখ্য তৈরি হয়। এমপি লিটনের বাড়ির দারোয়ান হিসেবে কাজ করতেন চন্দনের ভগ্নিপতি সুবল রায়। সে সুবাদে নিত্যদিনের খবরাখবর জানা সহজ ছিল চন্দনের। এমপি লিটনকে হত্যাকাণ্ডের কয়েকটি পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় চন্দনের সহযোগিতায় আবদুল কাদের খান নতুন পরিকল্পনা করেন। এ ঘটনায় চন্দন প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। লিটনের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে আবদুল কাদের খানসহ অন্য সহযোগীদের তথ্য দিতেন চন্দন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে তাদের সহযোগী মেহেদী, শাহীন, রানা, শামসুজ্জোহা, চালক হান্নান অস্ত্র চালানো ও হত্যাকাণ্ডের পর দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার প্রশিক্ষণ নেন। পরে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তারা এমপি লিটনকে নিজ বাড়িতেই হত্যার পরিকল্পনা করেন। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যাকারী শাহীন, রানা ও মেহেদী মোটরসাইকেলে করে এমপি লিটনের বাড়িতে যান এবং নৃশংসভাবে গুলি করে কিলিং মিশন শেষ করেন। হত্যাকাণ্ডের পর জড়িত আবদুল কাদের খানসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হলেও চন্দন পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপনে চলে যান। সেখানে নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে শাওন রায় নামে ভুয়া নাগরিকত্ব, আধার/রেশন কার্ড নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন। সেখানে অবস্থানকালীন রংপুর ও গাইবান্ধা সীমান্তের নিকটবর্তী অঞ্চল দিয়ে গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের চালান বাংলাদেশে পাঠাতেন তিনি। সম্প্রতি মাদক-সংক্রান্ত কাজে তিনি সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিলেন। পরে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী ভোমরা এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব।

 

সর্বশেষ খবর