দেশ তোলপাড় করা মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই।
বাবুল আকতারসহ সাতজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন। তবে তিনি বাবুলের বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ তুলেছেন। এর পরও তিনি মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান।
পিবিআই চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নাইমা হাসান বলেন, ‘দীর্ঘ আড়াই বছর তদন্ত শেষে মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি আদালতে। এ মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে সর্বোচ্চ পেশাদারি বজায় রেখেছি। যাদের বিরুদ্ধে সব রকমের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি, তাদের অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে বাবুল আকতারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।’চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বাবুল আকতারসহ সাতজনকে আসামি করে মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা অভিযোগপত্র মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠাব। যেহেতু এটা হত্যা মামলা, ম্যাজিস্ট্রেট সেটা দায়রা জজ আদালতে পাঠাবেন। এরপর পরবর্তী বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।’ জানা যায়, এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের জোগানদাতা হিসেবে মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারকে প্রধান আসামি করা হয় আলোচিত এ মামলায়। কিলিং মিশনের নেতৃত্ব দেওয়া মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা, এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়াকে আসামি করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। আসামির মধ্যে কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা ও খাইরুল ইসলাম কালু ঘটনার পর থেকেই পলাতক। জামিনে আছেন এহতেশামুল হক ভোলাইয়া। অন্য আসামির মধ্যে কারাগারে রয়েছেন বাবুল আকতার, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন ও শাহজাহান মিয়া। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু ও গুইন্যাকে। কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত নুরুন্নবী ও রাশেদকেও অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পিবিআইর জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছে ৯৭ জনকে।
যা রয়েছে অভিযোগপত্রে : আলোচিত মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার আড়াই বছরের মাথায় অভিযোপত্র জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বলা হয়- আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত এক নারীর সঙ্গে বাবুল পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এর জেরে মিতুকে খুনের পরিকল্পনা করেন বাবুল। স্ত্রীকে খুন করতে ৩ লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন তিনি। কিলিং মিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাবুলের বিশ্বস্ত সোর্স মুছাকে। ওয়াসিম, আনোয়ার, কালু, শাহজাহান, নুরুন্নবী ও রাশেদকে নিয়ে মিতুকে মুছা খুন করেন। বাবুলের নির্দেশে এ খুনের অস্ত্রের জোগান দেন ভোলাইয়া। খুনের পর বাবুল নিজেকে রক্ষা করতে কৌশলে জঙ্গিরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রচার করেন।