বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

উত্তরায় বিএনপির সমাবেশে বাধা মারধর ২৫ জন আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরায় সমাবেশে যোগ দেওয়ার সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের পথে পথে বাধা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর করেছেন তারা। এসব ঘটনায় বিএনপির ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

এদের মধ্যে একজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দ্বারা মারধরের বিষয়টি জানে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে লালমনিরহাটে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উত্তরার    সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে বিশ্বাস করে না। বিদেশি শক্তির ওপর ভর করে আবারও তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু সে আশা এবার তাদের পূর্ণ হবে না। জনগণ তাদের প্রতিহত করবে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘সাহস থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। এতই যদি উন্নয়ন করে থাকেন, আর এতই যদি আপনাদের জনপ্রিয়তা থাকে, তাহলে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় কিসের?’ গতকাল উত্তরার কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির অন্তর্ভুক্ত উত্তরা পশ্চিম, তুরাগ, বিমানবন্দর ও খিলক্ষেত থানা বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টুকু এসব কথা বলেন।

সমাবেশে আসার পথে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ক্ষমতাসীন দলের হেলমেটধারী নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মারধর করে ও বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা হেলমেট পরে লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে সমাবেশে আসার পথে বিভিন্ন স্থানে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের ২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, এমন একটা সমাবেশ করলেই যারা এভাবে বাধা দেয়, হামলা করে, তাদের অধীনে নির্বাচনে কী হবে সেটি তো ভাবাই যায় না! সমাবেশে যাওয়ার পথে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকের গাড়ি আটকে রেখে বাধা দেওয়া হয়। সমাবেশ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা মোটরসাইকেলে করে তার (টুকু) নিজের গাড়িরও গতি রোধ করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। একই অভিযোগ করেন সমাবেশের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন এলকায় সমাবেশে আসার পথে নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের আহত করেছে।’ তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে তিন কর্মী হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ব্যাপক শোডাউন করে সমাবেশস্থলে যোগ দেন। অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও  মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দীন আলম, উত্তর বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, মোস্তফা জামান, মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, আফাজ উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন দিলু, মো. আবদুস ছালাম, মো. দেলোয়ার হোসেন দুলু, আমান উল্লাহ ভূঁইয়া, হাজী জহিরুল ইসলাম, মো. চান মিয়া, হাজী আনোয়ার ঢালী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের আহ্বান জানান তিনি।

উত্তরায় সমাবেশে যেতে বাধা, বিএনপি নেতা-কর্মীদের মারধর : রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীদের ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বাধার মুখে পড়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তারা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাদের লাঠিপেটা করেছেন এবং ধাওয়া দিয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে, তারা এ ধরনের কোনো অভিযোগ পায়নি। পরিস্থিতি শান্ত ছিল। দুপুরের দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের কামারপাড়া মোড় ও বালুর মাঠ মোড় এলাকায় লাঠি নিয়ে অবস্থান করছেন কয়েকজন। তারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের গাড়ি আটকে দিচ্ছেন। গাড়ি ঘুরিয়ে অন্যদিকে পাঠাচ্ছেন। বিএনপির মিছিলে লাঠিপেটা ও ধাওয়া দিতেও দেখা গেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। একটি অটোরিকশায় করে সমাবেশের দিকে যাচ্ছিলেন কাউসার, রাকিব ও হামিদ নামের তিনজন। তারা নিজেদের ৫২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী বলে পরিচয় দেন। তারা আসেন উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে। বালুর মাঠ মোড়ে অটোরিকশাটি আটকে রেখে কয়েকজন মিলে তাদের মারধর করে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। তবে যারা মারধর করছিলেন, তাদের কেউই এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিএনপির লোকজন যেন ঠিকমতো সমাবেশে না যেতে পারে, সে জন্য আমাদের সড়কে থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা একটু ভয় দেখাচ্ছি তাদের।’

লালমনিরহাটে বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ভাঙচুর : যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে লালমরিহাটে। এ সময় যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ছয়জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ এতে বাধা দেয়। এরপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এ সময় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এর আগে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে টেবিল, চেয়ার ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ সময় বিএনপির ছয়জন নেতা-কর্মী আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হানিফ উদ্দিন, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আনিছুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রাবিউল ইসলাম ও যুবদল নেতা রাশেদ।

সর্বশেষ খবর