বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ড্যাপ সংশোধন না করলে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বে মানুষ

ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে গণমুখী ও বাস্তবমুখী করার দাবি বিএলডিএ ও রিহ্যাবের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) ব্যাপক ভুল-ত্রুটি ও অবাস্তব শর্ত রয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে ড্যাপ তৈরির সঙ্গে জড়িতদের খামখেয়ালির কারণে জনরোষ সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন রিয়েল স্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) নেতারা। গতকাল বিকালে রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত হোটেল শেরাটনে এক মতবিনিময় সভা শেষে সংগঠনের নেতারা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এ সময় রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের বসতে হবে, ড্যাপ নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার অনেক বিষয় রয়েছে। কারণ ড্যাপের কমিটি থেকে আমাদের যে ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল সেটার প্রতিফলন আমরা ড্যাপের গ্যাজেটে পাইনি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের বলা হয়েছিল ব্যবসাবান্ধব ও গণমানুষের পক্ষে ড্যাপ তৈরি করা হবে, কিন্তু তা হয়নি। এটা গণবিরোধী হয়েছে।’ তিনি বলেন, ড্যাপ সম্পর্কে বক্তব্যগুলো এমনভাবে এসেছে যে বিল্ডিং তৈরিতে উচ্চতায় কোনো রেসট্রিকশন নেই। কিন্তু আমরা ড্যাপের ভিতরে দেখছি এটা শুভঙ্করের ফাঁকি। আমরা যখন এটাকে পর্যালোচনা করলাম তখন দেখছি হাইট পাচ্ছি না, কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। (বিল্ডিংয়ের উচ্চতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে) ফলে আমাদের কন্ট্রাকশনের যে কোয়ানটিটি সেটাও বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক ৩০ শতাংশ কমে এসেছে। যা আমাদের প্রোডাক্টের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে এবং এটা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। ড্যাপের কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সরাসরি সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। একই সময়ে বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলডিএ) মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং রিয়েল স্টেট ব্যবসায় এক বছরের বাজেটের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ অর্থ সঞ্চালিত হয়। এক থেকে দেড় কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ ব্যবসা বা লিংকেজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যেমন সিমেন্ট-রডসহ ৪৭৮টি লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। এই যে লিংকেজ ইন্ডাট্রিজ, অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং মানুষের কর্মসংস্থান; সবগুলোই কিন্তু এ রিয়েল স্টেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ কারণে ড্যাপটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা পরিকল্পিতভাবে হবে, এটাই আমাদের চাওয়া। ড্যাপ মানেই ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান, তো এটা করতে গিয়ে যদি ভুল-ভ্রান্তি থাকে, দেশের বর্তমান অবস্থা, ভূমি বা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয় এবং ভবিষ্যতে এর ইম্প্যাক্ট কী হতে পারে সেটার সঙ্গে যদি সম্পৃক্ততা না থাকে তাহলে এটা ড্যাপ হলো না।

তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে দেখেছি এটার মধ্যে প্রচুর ভুল রয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট জায়গায় যারা আছেন তাদের আমরা অনুরোধ করব, এটাকে রিভিউ করে, এর ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধন করে এটাকে গণমুখী ও বাস্তবমুখী করা। যা সরকারের জন্য ভালো হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বিল্ডিংয়ের যা হাইট সে বিষয়টা চোখে পড়ার মতো ভুল। এটা খুব লেইম টাইপের লোকেরা করলেও এরকম ভুল হওয়ার কথা নয়। এখানে ক্রস মিসটেক হয়েছে এবং এটা যদি সংশোধন না হয়, ইম্প্যাক্টটা পড়বে ভবিষ্যতে যারা বাড়িঘর বা বিল্ডিং করবে। কমার্শিয়াল, রেস্টুরেন্ট, রেসিডেন্ট বা অন্য কোনোটাই ঠিকমতো হবে না। অথবা হওয়ার জন্য যে প্রস্তাবনা অনুমোদিত হচ্ছে সেই প্রস্তাবনার আলোকে যদি হয় তাহলে মানুষের মধ্যে একটা জনরোষ আসবে। কেন এটা হবে? কারণ আইনানুগভাবে নয়, তাদের অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হবে। এটা ঘটবে ড্যাপের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খামখেয়ালিপনার জন্য। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের মধ্যেও জনরোষ পড়ে যাবে। এ জন্য ড্যাপ খুবই গুরুত্বপূণর্, প্রাথমিকভাবে আমরা যেটা দেখেছি, এটা ভুল-ত্রুটিতে পরিপূর্ণ। এটা সরকারের জন্য সুখবর নিয়ে আসবে না। ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক বাংলাদেশের (আইএবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ড্যাপ কমিটির সঙ্গে আমাদের অসংখ্য মিটিং হয়েছে, লাইন বাই লাইন কারেকশন করার কথা বলা হয়েছে। তারা একমতও হয়েছিলেন কী থাকবে বইতে (ড্যাপে)। কিন্তু যখন আমরা বইটি পেলাম, তখন দেখলাম সেগুলোর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। অর্থাৎ আমাদের সঙ্গে যখন আলাপ চলছিল তখন প্যারালালই বইটি তৈরি করা হচ্ছিল বলে মনে হয়। এটা নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। বইটি বের হওয়ার পর আমরা প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি। এখানে সাধারণ মানুষ প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার ছোট ব্যবসা আছে সে এটা ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসায় চলে যেতে পারবে। কিন্তু সাধারণভাবে দেখা যাবে একজন জমির মালিকের আশপাশে বড় বিল্ডিং, কিন্তু তারটা হাইটে ছোট হচ্ছে। এটা তো মানুষ হিসেবে তার জন্য কষ্টের ব্যাপার হবে। যেসব ডেভেলপার অ্যাগ্রিমেন্টে সই করেছেন, জমির বিপরিতে টাকা দিয়েছেন, কমিটমেন্ট করতে হয়েছে যে আপনার জায়গায় এতগুলো ফ্ল্যাট হবে, সেগুলোর কী হবে? ঢাকার জনসংখ্যা কমানোর জন্য ড্যাপ করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা বলতে চাই, বিল্ডিংয়ের সংখ্যা ও হাইট কমিয়ে জনসংখ্যা কমানো যায় না। ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করতে হলে আনলিমিটেড হাইটে বিল্ডিং নিয়ে যেতে হবে। আর খালি জায়গা বাড়িয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ একজনের চার বিঘা জমি থাকলে এক বিঘা ব্যবহার করে যদি সেটা আকাশের দিকে তুলে চার বিঘার সমান ফ্ল্যাট বানাতে পারি, তাহলে বাকি তিন বিঘা জমি আমরা উন্মোক্ত রাখতে পারব। ওই মানুষগুলোর জন্য হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, খেলার জায়গা, গাড়ি রাখার জায়গাসহ সব কিছুর ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা ড্যাপ নিয়ে পর্যালোচনা ও সংশোধনের প্রস্তাব তৈরিতে যুক্ত থাকবেন। এ সময় সংগঠনটির অন্য সদ্যসরাও উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর