শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল

গোলায় নিহত ১, আহত ৫, ল্যান্ড মাইনে উড়ে গেল যুবকের পা

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল

মিয়ানমারের মর্টার শেলে আহত এক রোহিঙ্গা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু-সংলগ্ন বাংলাদেশের সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। নারী-পুরুষসহ আরও পাঁচজন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে উখিয়ার কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। নিহত হলেন মোহাম্মদ ইকবাল (১৮)। সে তুমব্রু সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডের বাসিন্দা মনির আহমদের ছেলে বলে জানা গেছে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে তুমব্রু নো ম্যানস ল্যান্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গতকাল দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু মিয়ানমার সীমান্তে ‘ল্যান্ড মাইন’ বিস্ফোরণে অংঞাথোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামে এক যুবকের পা উড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

মর্টার শেল বিস্ফোরণে আহতরা হলেন- সেলিম উল্লাহর মেয়ে সাদিয়া জান্নাত (১০), তার স্ত্রী সাবেকুর নাহার (৩০), ছৈয়দ করিমের ছেলে নবী হোসেন (২২), করিমের ছেলে ভুলু (৪৪) ও রহিম উল্লাহর ছেলে আনাছ (১২)। এরা সবাই তুমব্রু নো ম্যানস ল্যান্ডের বাসিন্দা। রোহিঙ্গারা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে উখিয়ার কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। পরে গুরুতর আহতদের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করেন বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে মিয়ানমারের পাহাড় থেকে মুহুর্মুহ গুলিবর্ষণের পাশাপাশি থেমে থেমে মর্টার শেল ছোড়া হচ্ছিল। বেশ কিছু গুলি ও মর্টার শেল জিরোলাইনের বিভিন্ন জায়গায় এসে পড়ছিল। রাত ৮টার দিকে বিকট শব্দে একটি মর্টার শেল আশ্রয় শিবিরের ওপর এসে পড়ে। এত ছয়জন রোহিঙ্গা আহত হন। পরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ও পরে মিয়ানমারের একটি জেট ফাইটার বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে তুমব্রু এলাকা চক্কর দিয়ে রাখাইন রাজ্যের দিকে ফিরে গেছে বলে দাবি করেন দিল মোহাম্মদ।

ঘুমধুম ২ নম্বর ওয়ার্ডের তুমব্রু এলাকার ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টু বলেন, সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ গোলাগুলির বিকট শব্দে তুমব্রুর ভূখণ্ড কাঁপছে। এতে এলাকার মানুষ ফের আতঙ্কে আছেন। এক মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না।

তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় পাঁচ বছর ধরে আশ্রয়শিবির গড়ে তুলে বসবাস করছে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রয়শিবির ঘেঁষে (পেছনে) মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড়। পাহাড়ের ওপর দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক তল্লাশিচৌকি। তিন দিন ধরে আশ্রয়শিবিরের পেছনের পাহাড়ে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে পাহাড়ের চৌকি থেকে ব্যাপক হারে গুলি ছোড়ার পাশাপাশি মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। কিন্তু কী কারণে এত বেশি গোলা ও মর্টার শেল ছোড়া হচ্ছে, তা জানা যাচ্ছে না।

৯ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি ভারী অস্ত্রের গুলি তুমব্রু বাজারের পাশে কোনারপাড়ার কৃষক শাহজাহানের বাড়ির আঙিনায় এসে পড়ে। বাড়ির পাশেই শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির। এর আগেও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি মর্টার শেল এসে পড়ার ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ।

মাইন বিস্ফোরণে আহত আরও এক : গতকাল দুপুরে একই  সীমান্তে হেডম্যানপাড়ায় মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন এক বাংলাদেশি যুবক। আহত অংঞাথোয়াই তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তুমব্রু হেডম্যানপাড়ায়। ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, তুমব্রু সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলার এলাকায় স্থলমাইন বিস্ফোরণে হেডম্যানপাড়ার অংঞাথোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা নামে ব্যক্তি আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকায় অংঞাথোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা গরু চরাচ্ছিলেন। হঠাৎ তার গরু সীমান্তের ওপারে চলে যায়। গরুটিকে ফিরিয়ে আনতে গেলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সীমান্তে পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরিত হয়ে তার বাম পায়ের গোড়ালিসহ পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর