রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া

বিশ্বনেতারা বাসে চড়ে যাবেন

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

বিশ্বনেতারা বাসে চড়ে যাবেন

ডেভিড বেকহাম। বিখ্যাত এই ফুটবল তারকা ব্রিটেনে সাধারণ মানুষের কাছে আকাশের তারার মতোই। সেই আকাশের তারা দাঁড়িয়েছেন ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় লাইনে। রানিকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। তিনি গণমাধ্যমকে বলছিলেন, রানির সঙ্গে কিছু স্মৃতি আছে তার। ব্রিটিশ রানি তাকে ‘অর্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার’ খেতাব দিয়েছিলেন। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো তার কর্তব্য। শুধু কি ডেভিড বেকহাম? একইভাবে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, যিনি এখনো ব্রিটিশ সংসদ সদস্য থেরেসা মে, ডেভিড ক্যামেরুন থেকে শুরু করে অনেকেই এভাবে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। যদিও কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘ লাইন উপেক্ষা করে কিছু রাজনীতিবিদ রানিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, সেটি নিয়েও ক্ষোভ ঝাড়ছেন মানুষ। বলছেন, সবার প্রতি সমান দৃষ্টি থাকতে হবে।

এটাই ব্রিটেনের সৌন্দর্য, এখানে সবাই সমান অধিকার বোঝেন এবং সেটি আদায়ের জন্য কথা বলতে জানেন। রানির মৃত্যু দেশের ধনী, গরিব, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে।

এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথিরা ব্রিটেনে আসা শুরু করেছেন। রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিশ্বনেতাদের বাসে চড়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে যুক্তরাজ্যে যেতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আর বিমানবন্দর থেকে বাসে অনুষ্ঠানস্থল পর্যন্ত যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগের দিন ১৮ সেপ্টেম্বর রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করা হবে। ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের এক সূত্র বলছে, এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশ থেকে ৫০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত থাকবেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর খবরে বলা হয়, ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে আয়োজিত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে কিংবা ওই সময় লন্ডনের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে অতিথিদের নিজস্ব গাড়ি বা হেলিকপ্টার ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর বদলে তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারায় পরিচালিত বাস ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এ বাসগুলো পশ্চিম লন্ডনের একটি এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকবে। সেখান থেকে এগুলোতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার বরাতে পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি দূতাবাসগুলোয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রটোকল বার্তা পাঠানো হয়েছে। পলিটিকোর ওই প্রতিবেদনে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে ‘কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সড়কে জারি করা বিধিনিষেধ’ নিশ্চিত করাকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ নিয়মের কথা শুনে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করছেন। লন্ডনভিত্তিক এক বিদেশি কূটনীতিক পলিটিকোকে বলেন, ‘আপনারা জো বাইডেনকে বাসে কল্পনা করতে পারেন?’ নিয়ম অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্টরা দীর্ঘ যাত্রার ক্ষেত্রে এয়ারফোর্স ওয়ান বিমান ব্যবহার করে থাকেন। গন্তব্যস্থলের বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে তারা মেরিন ওয়ান হেলিকপ্টার কিংবা সাঁজোয়া লিমোজিন গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন।

লন্ডনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের এক মুখপাত্রের বরাতে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগত অতিথিভেদে আলাদা নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

১৯ সেপ্টেম্বর রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাবেষ্টিত রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানগুলোর একটি। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো পুলিশ কর্মকর্তাকে লন্ডনে মোতায়েন করা হবে। তারা মানুষের ভিড় সামাল দেওয়ার কাজে নিযুক্ত থাকবেন।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আগত নেতারা রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। এর জন্য তারা তিন মিনিট সময় পাবেন। ল্যানকেস্টার হাউসে শোকবইয়ে স্বাক্ষর করবেন তারা।

রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগের দিন রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করবে যুক্তরাজ্য। এদিন ঠিক রাত ৮টায় সারা দেশ এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এদিকে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে মস্কো। বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ ধরনের সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত অনৈতিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর থেকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নাজুক অবস্থার মধ্যে আছে। ৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান। আগামী সোমবার তার রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশ্বের অনেক নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তালিকা থেকে বাদ পড়েছে রাশিয়া। গতকাল এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে মস্কো। এক বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, যুক্তরাজ্য শোককে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইছে। এটি অত্যন্ত অনৈতিক। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এমন আচরণের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য রানির স্মৃতির প্রতি অবমাননা করছে। আমন্ত্রণ না পাওয়াদের তালিকায় রাশিয়ার পাশাপাশি বেলারুশ ও মিয়ানমারের নাম রয়েছে। বেলারুশ ও মিয়ানমার এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

 

সর্বশেষ খবর