মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

হামলা মামলা অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় আবারও বিএনপি ও যুবদলের নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ভুলতা এলাকায় ছাত্রদলের নেতার বাড়িঘরে হামলা  ও লুটপাটের পর এবার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র  এলাকায় বিএনপি ও যুবদলের পাঁচ নেতার বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার মধ্যরাতে দেড় ঘণ্টা ধরে এসব হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। হামলাকারীরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। ছাত্রদল নেতার বাড়িতে হামলা-লুটপাটের সময় বাড়ির কাছে থেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল পুলিশ। বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই থানায় ছাত্রলীগ নেতা গতকাল মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ১০ জনের নামোল্লেখ করে দেড় শ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমাদের থানা ও জেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন এসব তথ্য।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের উদ্ধৃতি দিয়ে তারা জানান, হামলাকারীরা রূপগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বজলুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে তারা অংশ নেন। যুবদলের নেতা মো. মাসুম বলেন, ‘হামলাকারীরা সবাই স্থানীয় বজলুর মেম্বারের লোকজন। এ এলাকায় বজলুর মেম্বারের বাইরে কেউ নাই। ঘরে যা জিনিসপত্র ছিল, লাঠি দিয়ে আঘাত করে সবকিছু ভেঙে রেখে গেছে তারা।’

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছে, ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীরা ‘বিএনপির দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দেয়। বাড়ির লোকজনকে মারধর ও জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভুলতা এলাকায় জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমানের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। একই রাতে যুবদল ও ছাত্রদলের আরও পাঁচ নেতা-কর্মীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।

রবিবার মধ্যরাতে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া সাংগঠনিক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুন মিয়াজি, যুগ্ম-সম্পাদক ইউসুফ হাওলাদার, ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মো. কামাল, ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য হযরত আলী ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো. মাসুমের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ করা হয়।

৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো. মাসুম বলেন, রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক তার বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ির প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পরিবারের লোকজনকে মারধর করে। ঘরে থাকা সব আসবাব ভাঙচুর করে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। তার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারের গলায় দা ঠেকিয়ে সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়। ঘরে থাকা ৯০ হাজার টাকাও নিয়ে যায়। তার বাবা আবুল হোসেন ও মা মাহফুজা বেগমকেও মারধর করে সন্ত্রাসীরা।

ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ইউসুফ হাওলাদারের বাড়িতেও হামলা হয়েছে। তার পরিবারের এক সদস্য বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে হামলা হয়েছে। তখন বিদ্যুৎ ছিল না। হামলার সময় হামলাকারীরা ‘বিএনপির দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দেয়। হামলার সময় তাদের দুটি মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। হামলার পর আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুন মিয়াজি বলেন, এক মাস ধরে রূপগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট চলছে। সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরপরও নিজেদের বাড়িঘর রক্ষা করা যাচ্ছে না।

রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, এটা ধারাবাহিক হামলার অংশ। ২৯ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৪২ জন নেতা-কর্মীর বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে। এদিকে শনিবার রাতে ভুলতা এলাকায় জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমানের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রবিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

ছাত্রলীগের মামলায় জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতিসহ আসামি দেড় : ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা উল্লেখ করে জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমানসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত দেড় শ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন এক ছাত্রলীগ নেতা। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ এনে গতকাল রূপগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হানিফ মিয়া।

মামলায় নামোল্লেখ করা আসামিরা হলেন জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান, মাসুম, সাহাবুদ্দিন, ওমাইনি, বাবু, শিশির, রনি হাসান মাটি, সাব্বির, রাতুল ও আলামিন। এদিকে মামলা করার পর থেকেই নেতা-কর্মীসহ বিএনপি সমর্থকরা গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

বাদী ও ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হানিফ মিয়া মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে উল্লিখিত ওই ১০ জনসহ অজ্ঞাত প্রায় দেড় শ লোক লাঠিসোঁটা, ককটেল, পিস্তল, রামদা ও দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আউখাব অনুপম গার্মেন্টের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মশাল মিছিল বের করে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় চাচা রুহুল আমিন ও সানিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং পিটিয়ে আহত করে। পরে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা করে আহতের ঘটনা ঘটায়। এরপর আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। ভাঙচুরে বাধা দিতে গেলে আমার বাবা সাহাবুদ্দিন ও মাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তারা। এ ছাড়া যুবদল নেতা নুরুর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং লুটপাট করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।’

মাসুদুর আরও বলেন, ‘আমাদের ওপর হামলা করে আহতের ঘটনা ঘটিয়ে বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে উল্টো আমাদের নামেই মামলা দেওয়া হয়েছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর