মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রতি ইভিএম ৩ লাখ মোট খরচ ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের জন্য আরও ২ লাখ ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে প্রতিটি ইভিএম ইউনিটের মূল্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সভায় এ প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, কমিশন সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়। প্রকল্পটি এখন একনেকের অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

এদিকে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের হাতে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে যা দিয়ে ৭০-৭৫টি আসনে ভোট গ্রহণ সম্ভব হবে। তবে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলেও আর ২ লাখ ইভিএম কিনতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। আগামী বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে আগামী বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এ প্রকল্পের আওতায় কেনা হবে ২ লাখ ইভিএম। ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়া প্রতিটি ইভিএম ইউনিটের মূল্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ২ লাখ ইভিএম কিনতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ইভিএম সংরক্ষণে ১০ অঞ্চলে ওয়্যারহাউস নির্মাণ; ১ হাজার ৩০৩ জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ; গাড়ি কেনা তথা চারটি জিপ, ৫৩৪টি পিকআপ কেনা, ইভিএম পরিচালনায় দক্ষ জনবল তৈরির প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ প্রকল্পে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত সময়ে প্রতিটি ইভিএম কেনা হয়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকায়, তখন ডলারের মূল্য ছিল ৮৬ টাকা। এবারেও প্রতিটি ইউনিটের সম্ভব্য মূল্য ধরা হচ্ছে ২ হাজার ৪৮৭ ডলার। এক্ষেত্রে ডলারের মূল্য ১১০ টাকা হিসাবে প্রতি ইউনিটের মূল্য হতে পারে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭০ টাকা। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিটের সঙ্গে আরও ৩১ হাজার ৪৩০ টাকার অন্যান্য জিনিস কিনতে হবে। সেই হিসাবে প্রতিটি ইভিএম ইউনিটের মূল্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর বাইরে প্রতি ইউনিটের মূল্যের সঙ্গে যুক্ত হবে ভ্যাট-ট্যাক্স।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা হবে। এ ছাড়া ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ, জনবল তৈরি ও প্রশিক্ষণের জন্যও ব্যয় রাখা হয়েছে এখানে। আমরা এক সপ্তাহের মধ্যেই এ প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাব।

গতকাল নির্বাচন ভবনে কমিশন সভায় চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। কভিডে আক্রান্ত সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বাসা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন। তার সভাপতিত্বেই কমিশনের এ মুলতবি সভা হয়। গত কমিশন বৈঠকে প্রকল্পের ইভিএমের বাজার দরসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না পাওয়ায় সভাটি মুলতবি করা হয়। গতকাল সভায় সবকিছু পর্যালোচনা করে প্রস্তাবিত প্রকল্পে সায় দেয় কমিশন।

বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বর্তমানে আমাদের কাছে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোট করা সম্ভব। তাই ১৫০টি আসনে নির্বাচন করতে হলে নতুন করে ইভিএম কিনতে হবে। এ জন্য ইসি সচিবালয় নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব কমিশন সভায় তুলেছিল। আমরা এটার অনুমোদন দিয়েছি। এখন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। তারা অনুমোদন করবে কি করবে না এটা তাদের বিষয়।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে ইসির কাছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদার কমিশন এসব ইভিএম কেনার প্রথম প্রকল্প নেয়। শেষ পর্যন্ত মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে ভোটের বছর খানেক আগেই নতুন ইভিএম সংগ্রহের কাজ শেষ করতে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি সরকারের সায় পেলে ভোটের আগে সব কেনাকাটা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কাজ সম্ভব বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যে কর্ম পরিকল্পনা ইসি প্রকাশ করেছে, তাতে মহানগর ও জেলা সদরের সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পা রাখা হয়েছে। ইভিএম সংক্রান্ত বর্তমান প্রকল্প ২০২৩ সালের জুনে শেষ হচ্ছে। ২০১৮ সালে নেওয়া ওই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

সর্বশেষ খবর