বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দখল ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছেন চট্টগ্রামের ডিসি

হাজার কোটি টাকার খাসজমি উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দখল ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছেন চট্টগ্রামের ডিসি

মমিনুর রহমান

দখলবাজ, ভূমিদস্যু, পাহাড়খেকো ও দুর্নীতিবাজদের কাছে আতঙ্কের নাম চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান। তাঁর প্রচেষ্টায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা মূল্যের খাসজমি উদ্ধারের কার্যক্রম চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকার খাসজমি উদ্ধারের পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধে একের পর এক অভিযান, গ্রেফতার, মামলা দায়ের, বদলি, বরখাস্তসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিরাগভাজনদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন তিনি। সব উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা, সার্কেল ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস দালালমুক্ত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। জানা গেছে, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার মমিনুর। ছদ্মবেশে বিভিন্ন উপজেলা, সার্কেল ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস আকস্মিক পরিদর্শন করেন। অভিযান চালিয়ে ভূমি অফিসের দালালদের জেলহাজতসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি। এ ছাড়া স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারি অফিসগুলোয় স্থাপন করেছেন সিসিটিভি।

ডিসি মমিনুর রহমান চট্টগ্রামের পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যুদের থেকে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার মূল্যবান খাসজমি উদ্ধার করেন। বর্তমানে সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ৩ হাজার ১০০ একর সরকারি খাসজমি উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। চট্টগ্রামের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে এখানে নাইট-সাফারি পার্কসহ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পরীর পাহাড় থেকে ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশের ৫৮৭টি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করেন তিনি। তাঁর উদ্যোগে উত্তর কাট্টলী মৌজার প্রায় ৩০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণে ডিপিপি প্রস্তুতের কাজ চলছে।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রাম থেকে যুক্ত থাকা যাত্রা মোহন সেনের মহামূল্যবান বাড়িটি উদ্ধার ও সংরক্ষণেও ভূমিকা রয়েছে ডিসি মমিনুরের। বর্তমানে এ বাড়িটি সংরক্ষণ করে বিপ্লবী জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলার চান্দগাঁও (বন্দর) মৌজায় ৭৩.৪২ একর খাসজমিতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে সরকারি অফিসের জন্য বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং সুপরিকল্পিত সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।

পর্যটনের বিকাশেও ভূমিকা রয়েছে তাঁর। দেশজুড়ে পরিচিতি পাওয়া সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, সেখানে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও বিচটিকে সংরক্ষিত পর্যটন জোন হিসেবে গেজেটভুক্ত করার উদ্যোগ নেন মমিনুর রহমান। চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসনের নিজস্ব পরিচালনায় ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য সুষ্ঠু যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের সরাসরি পরিচালনায় একটি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা মাথায় আসে তাঁর। এরই ফলে কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী বছর শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। পূর্ব নাছিরাবাদ মৌজায় অবস্থিত একটি এপিএমবি বোর্ড কর্তৃক বরাদ্দকৃত ভবনে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হবে। প্রায় এক যুগ পরে তাঁর উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২১৭ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। আরও ৪৭ জন নতুন কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য নতুন প্রাণী সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধ, ভেজালবিরোধী অভিযান ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। মানবিক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে রয়েছেন মমিনুর রহমান। চলতি বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডে বি এম কনটেইনার ডিপোয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহত পরিবারগুলোর পাশে ছিলেন জেলা প্রশাসক। পাহাড়ধসের সময় নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর ও সার্বিক ব্যবস্থপনার জন্যও তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর নির্দেশনায় ৮০০ জনের ‘এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন অ্যান্ড ডিজাস্টার রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেও সজাগ দৃষ্টি ডিসি মমিনুরের। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর ঘিরে হাটহাজারীতে হেফাজতের তাণ্ডব দমনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। এ ছাড়া চা শ্রমিকদের ধর্মঘট, পরিবহন ধর্মঘট, ট্যাঙ্ক-লরি-প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট, প্রতিটি শ্রমিক অসন্তোষ সাফল্যের সঙ্গে নিষ্পত্তি ও সমাধান করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করেন। চট্টগ্রামে হার্ট ফাউন্ডেশন চালুতে সহায়তা করেন। এ ছাড়া অবৈধ বালু ও মাটি কাটা বন্ধ, হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ পতেঙ্গা, আনোয়ারা ও গুলিয়াখালী সি বিচকে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করা, নতুন শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি ভবন নির্মাণ, হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন মমিনুর। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা ষড়যন্ত্র চলছিল। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়কার অসত্য সংবাদ কিছু কিছু মিডিয়ায় প্রকাশ করা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত একটি লিগ্যাল নোটিস ইস্যু হওয়ার আগেই বা নোটিস গ্রহীতারা নোটিস পাওয়ার আগেই কিছু মিডিয়ায় লিগ্যাল নোটিস দেওয়ার বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয়, বিষয়টি সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত একটি অপপ্রচার।’

 

সর্বশেষ খবর