বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ী অপহরণে সাত ডিবি পুলিশের সাত বছর করে জেল

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফে ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাত সদস্যকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৩ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত গতকাল এ রায় দেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বরখাস্তকৃত উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান ও আবুল কালাম আজাদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ফিরোজ, গোলাম মোস্তফা ও আলাউদ্দিন এবং কনস্টেবল মো. আল-আমিন ও মোস্তফা আজম।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আসামিরা পুলিশ সদস্য হয়েও উন্নত ও আধুনিক প্রশিক্ষণ পাননি। এজন্য নৈতিকতাবোধ ও শিষ্টাচারের যথেষ্ট অভাব থাকায় অবৈধ  অর্থ উপার্জনের দিকে তারা ধাবিত হয়েছেন। বিজ্ঞ বিচারক বলেন, পুলিশ সদস্যদের দ"ঢ় মনোবল, নৈতিকতা ও সেবাধর্মী মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন হওয়া দরকার। এজন্য পুলিশ সদস্যদের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের সর্বো"চ সাজা হওয়া দরকার ছিল। কিš' আসামিদের অধিকতর কম বয়স, সবাই এখনো তরুণ বিবেচনায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও তাদের অপোকৃত কম সাজা দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, ডিবি পুলিশের সাত সদস্যকে ব্যবসায়ী অপহরণ ও ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় দণ্ডবিধির ৩৮৬ ধারায় প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক বছর করে কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় প্রত্যেককে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, দুটি ধারায় প"থক সাজা হলেও প্রত্যেক আসামিকে দেওয়া শাস্তি একসঙ্গে চলবে বলে বিজ্ঞ বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছেন। এতে প্রত্যেকের সাত বছর করে সাজা কার্যকর হবে। রায় ঘোষণার সময় সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান রাষ্ট্রপরে এ আইনজীবী। মামলার নথির বরাতে পিপি বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর কক্সবাজার সদর থানার পেছনের রোড থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী একদল লোক টেকনাফের ব্যবসায়ী আবদুল গফুরকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তাঁর স্বজনদের কাছে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একপর্যায়ে দেনদরবারের পর ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় পরিবার। পরে ওই টাকা পৌঁছে দেওয়া হলে পরদিন ভোররাতে আবদুল গফুরকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুরে ছেড়ে দেওয়া হয়।’ এরপর আবদুল গফুরের স্বজনরা বিষয়টি শামলাপুরে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা চৌকির দায়িত্বরত সদস্যদের অবহিত করেন। মুক্তিপণ আদায়কারী ডিবি পুলিশের সদস্যরা মাইক্রোবাসযোগে মেরিন ড্রাইভ সড়কে নিরাপত্তা চৌকিতে পৌঁছালে সেনা সদস্যরা থামিয়ে তল্লাশি চালান। এতে পুলিশ সদস্যদের হেফাজত থেকে ১৭ লাখ টাকা পান। ওই সময় এসআই মনিরুজ্জামান দৌড়ে পালিয়ে গেলেও সেনা সদস্যরা বাকি ছয়জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেন। এ ঘটনায় আবদুল গফুর বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় ডিবি পুলিশের সাত সদস্যকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার পর এদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

 

 

সর্বশেষ খবর