বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গোলাগুলি এবার উখিয়া সীমান্তেও

♦ মিয়ানমারে স্কুলে ভয়াবহ হামলায় ১১ শিশু নিহত ♦ নিরাপত্তা চেয়ে রোহিঙ্গাদের চিঠি জাতিসংঘে

কক্সবাজার ও বান্দরবান প্রতিনিধি

গোলাগুলি এবার উখিয়া সীমান্তেও

মিয়ানমার বাহিনীর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি স্কুল -বিবিসি

কক্সবাজারের উখিয়া পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত এলাকায় গুলির বিকট শব্দ শুনেছে স্থানীয়রা। গতকাল সকাল থেকে মর্টার শেলের মতো ভারী অস্ত্রের গোলার শব্দে কেঁপে ওঠে পালংখালী এলাকা। এতদিনের মতো নাইক্ষ্যংছড়ির ওপারে গতকালও ভোর থেকে গোলাগুলি হয়েছে। সীমান্তের ওপারে অশান্ত পরিস্থিতির কারণে তুমব্রু এলাকার যে ৩০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল- গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের সরানোর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। অন্যদিকে, এদিকে, বাংলাদেশের সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর অব্যাহত মর্টার শেল ও গোলাবর্ষণের কারণে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন শূন্যরেখা বসবাস করা রোহিঙ্গারা। শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ জাতিসংঘের কাছে চিঠিটি পাঠান। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, আঞ্জুমান সীমান্ত এলাকার ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বে গুলির আওয়াজ শুনতে পায় স্থানীয়রা। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাবর্ষণ হয়। এ বিষয়ে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবিহিত করেছি। সীমান্তে বিজিবির নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সীমান্ত এলাকার মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কে রয়েছে। পালংখালী আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তের বাসিন্দা আবদুল আজিজ জানান ‘গতকাল সকালে আঞ্জুমান সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এলাকার মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।’ অন্যদিকে, তুমব্রু পশ্চিমকূল ও কোণারপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোরে ফজরের নামাজের আজানের আগে ওপারে প্রচণ্ড গোলাগুলি এবং মর্টার শেলের বিকট আওয়াজে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। এরপর থেকে কখনো কখনো বিরতিহীনভাবে, কখনো মাঝে মাঝে গোলাগুলি চলতে থাকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। স্থানীয় বাসিন্দা ফজল করিম জানান, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প এলাকায় সংঘর্ষের এসব ঘটনা ঘটে। তিনি জানান, ওপারে ঢেকুবুনিয়া এলাকায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর এরিয়া সদর দফতর রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, জান্তা সরকার বিরোধী গেরিলা গ্রুপ আরাকান আর্মি (এএ) গোলাগুলির মূল টার্গেট ছিল ঢেকুবুনিয়া বিজিপির সদর দফতর। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জিরো লাইনের কাছাকাছি অবস্থিত ক্যাম্পপাড়া এবং পশ্চিমকূলের বাসিন্দারা জানান, সীমান্তের জিরো লাইনের খুব কাছাকাছি থাকায় ওপারের গুলি, মর্টার শেল ও রকেট লাঞ্চার তাদের গ্রামের ওপর পড়ার আশঙ্কায় রাতে তাদের ঘুম আসে না। দিনেও তাদের কাটে উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে। ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু হেডম্যান পাড়া থেকে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত লাইন বরাবর মঙ্গলবারও বিজিবির সশস্ত্র টহল লক্ষ্য করা গেছে। এরপরও এই এলাকায় অবস্থিত ১০/১২টি গ্রামের বাসিন্দাদের মন থেকে শঙ্কা কাটানো যাচ্ছে না। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, তুমব্রু এলাকার যে ৩০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল, আমরা প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে রেখেছি। তাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কচুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নাজুক হলে দ্রুত তাদের সরিয়ে আনা যাবে। এদিকে বান্দরবান জেলা প্রশাসন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী অতি দরিদ্র ১০০ পরিবারকে সরকারি সাহায্য দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো সাহায্য প্রদান শুরু হয়নি। সীমান্তের কাছাকাছি রেজু গর্জনবুনিয়া স্কুলের সহকারী শিক্ষক নুরুল কবির জানান, সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির ঘটনার কারণে মঙ্গলবারও স্কুলে উপস্থিতির হার অনেক কম ছিল। অভিভাবকরা উৎকণ্ঠায় থাকায় তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সাহস পাচ্ছে না বলে জানান নুরুল কবির। এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের একটি স্কুলে ভয়াবহ হামলায় ১১ শিশু নিহত হয়েছে।

নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের চিঠি : জাতিসংঘের কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ২০১৭ সালে সামরিক জান্তা ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করেছে। আমরা চিঠিতে জাতিসংঘকে জানিয়েছি, সামরিক জান্তা বাহিনী যে কোনো মুহূর্তে আমাদের ওপর আরও বড় আক্রমণ করতে পারে। চিঠিতে এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতিসংঘকে শূন্যরেখার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান করা হয়েছে বলে জানান দিল মোহাম্মদ। এ চিঠি জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে সোমবার বিকালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু জিরোপয়েন্টের অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা মর্টার শেল হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন রোহিঙ্গারা।

সর্বশেষ খবর