বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদ্রোহী সামলাতে হিমশিম মিয়ানমার

বাংলাদেশ সীমান্তে তীব্র হচ্ছে লড়াই

প্রতিদিন ডেস্ক

সীমান্ত এবং দূরবর্তী অঞ্চলগুলো ছাড়িয়ে এখন গৃহযুদ্ধ মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে এ যুদ্ধ। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থিদের সশস্ত্র যুদ্ধে এখন সেনাবাহিনী থেকেও পক্ষ ত্যাগ শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় মরিয়া হয়ে ওঠা মিয়ানমার বাহিনী উত্তরাঞ্চলের সাগাইঙ্গ অঞ্চলের একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে বহু শিশুকে হত্যা করেছে। গতকাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, হামলা চালানোর পর অন্তত ১১ শিশু নিহত এবং আরও ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। সূত্র : বিবিসি। পর্যবেক্ষকদের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, আশঙ্কা মিয়ানমারে এখন যে অবস্থা চলছে তাতে অচিরেই দেশটি একটি পুরোদস্তুর গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এদিকে ইউনেসেফ বলেছে, স্কুলে কপ্টার হামলা ঘটেছে গত সপ্তাহের শুক্রবার। এরপর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে ওই স্কুলের দেয়ালে গুলির গভীর গর্ত এবং রক্তের দাগ। এ বিষয়ে সামরিক সরকার দাবি করেছে, তারা স্কুলে লুকিয়ে থাকা বিদ্রোহীদের ওপর আক্রমণ করছিল। এদিকে বিবিসির সংবাদদাতা জানান, এ হামলা যে এলাকায় ঘটেছে সেখানে গত বছরের অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক সশস্ত্র প্রতিরোধ চলছে। ওই হামলায় নিহত শিশুদের বয়স সাত থেকে ১৪ বছর। নিহত তিন মেয়ের বয়স সাত, নয় ও ১১ বলে জানা গেছে। এমনকি হামলার সময় কাছাকাছি একটি স্থানে মাছ ধরতে থাকা ১৩ বছরের এক শিশুও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তবে বেশির ভাগ শিশুর লাশই বার্মিজ সেনারা নিয়ে গেছে।

ছড়িয়ে পড়ছে গৃহযুদ্ধ : অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেনাশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা। মিয়ানমারের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সামরিক বাহিনী বা সরকারের সংঘাতের ইতিহাস পুরনো হলেও এখন সেটা আরও বিস্তৃত হয়ে উঠেছে। আদিবাসী বা বিচ্ছিন্নতাপন্থি গ্রুপগুলোর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছেন গণতন্ত্রপন্থি যোদ্ধারাও। ফলে সীমান্ত বা দূরবর্তী অঞ্চলগুলো একসময় সংঘাতপ্রবণ হলেও এখন সেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলেও।

খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের এ সংঘাতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারতে। বাংলাদেশের ঘুমধুম ও উখিয়া সীমান্ত এলাকায় অব্যাহত গোলাগুলির কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। সীমান্তের ভিতরে গোলা পড়ায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কয়েকবার সতর্কও করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রাজধানীতে কারফিউ : দেশজুড়ে সংঘাত পরিস্থিতিতে রাজধানী নেপিদো ও আশপাশ শহরগুলোয় রাতে কারফিউ জারি করছে মিয়ানমার সামরিক জান্তা। ফলে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শহরে চলাফেরা করা যাচ্ছে না।

এদিকে থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদপত্র ইরাওয়ার্দি জানিয়েছে, কারফিউর পাশাপাশি রাজধানীতে বাংকার তৈরি করছে সামরিক বাহিনী। এ ছাড়া পুলিশের নতুন নতুন চৌকি তৈরি করা হয়েছে এবং নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সামরিক বাহিনীর সদস্য বা পরিবার বসবাস করে সেসব এলাকায় চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ও বার্তা সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, সহিংসতাপ্রবণ এলাকাগুলো ছাড়াও অসংখ্য শহরে কারফিউ জারি এবং মানুষজনের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার তারা নতুন একটি আইন জারি করেছে যাতে বলা হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী কোনো পোস্টে লাইক বা শেয়ার করা হলেও কারাদণ্ড দেওয়া হবে।

অন্য এক সূত্রের তথ্যে জানা গেছে, মিয়ানমারের শীর্ষ সাতটি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর সদস্যরা ওয়া রাজ্যের পাংসাংয়ে গতকাল বৈঠকে বসেন। কভিড মহামারির পর এই প্রথম এসব গোষ্ঠীর নেতারা একত্রে বৈঠকে মিলিত হতে পেরেছেন। এসব গোষ্ঠীর প্রায় ৩০ হাজার সদস্য রয়েছেন। বিদ্রোহী আরাকান আর্মির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রয়োজনেই তাঁরা বৈঠকে বসেন। এর মূল লক্ষ্য নিজেদের মধ্যে একতা আরও বৃদ্ধি করা। অন্যদিকে বিবিসির বার্মিজ সার্ভিস জানিয়েছে, এখন উত্তর রাখাইন, চিন, শান ও কাচিন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে বার্মিজ সেনাবাহিনী। তারা ভারী অস্ত্র ও ট্যাঙ্কের সহায়তায় অনেক শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা এরই মধ্যে সেখানকার একাধিক গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে এবং গ্রামে গ্রামে অভিযান শুরু করেছে। এ ছাড়া গণমাধ্যম ইরাওয়ার্দি খবর দিয়েছে, মিয়ানমারের ১০০-এর বেশি সৈনিক ও অফিসার পক্ষ ত্যাগ করে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জন অফিসার রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর