শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আহত যুবদল কর্মীর মৃত্যু

বিএনপির দাবি গুলিবিদ্ধ, পুলিশ বলছে নিজেদের সংঘর্ষে প্রাণহানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় সংঘর্ষে আহত যুবদল কর্মী শাওন মারা গেছেন। গতরাত ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) আইসিইউতে শাওনকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বিএনপির দাবি- শাওন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে তার মৃত্যু হয়েছে। তার এই মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর পরই বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ বিএনপি ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতারা হাসপাতালে ছুটে যান। জেলার মীরকাদিম পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন শাওন। দুই বছর আগে বিয়ে করেন। তার এক বছরের শিশু একটি সন্তান রয়েছে। আজ তার লাশ শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও নামাজে জানাজার উদ্দেশ্যে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নিয়ে আসা হতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম শাওনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জে বুধবার বিকালে সংঘর্ষের পর রাতভর বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। বিএনপি বলেছে, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ রাতভর চিরুনি অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় পুলিশ দুটি মামলা দায়ের করেছে। এতে ১ হাজার ৩৬০ বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের ওপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকালে মুন্সীগঞ্জে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।  

এর মধ্যেই সাবেক যুবদল নেতার সুতার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দিবাগত শেষরাতে উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুদ্দিনের সুতার কারখানায় এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে সুতা ও সুতার কাঁচামালসহ ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কারখানার মালিক। এর আগে তিন পুলিশ সদস্য ও দলীয় অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কারখানায় লুটপাট চালিয়েছেন বলে দাবি করেন নিজামুদ্দিন।

যুবদল নেতা নিজাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল হাইয়ের বোনের ছেলে। অগ্নিকাণ্ডে কারখানার পাশে অবস্থিত আরও পাঁচটি ঘর পুড়ে যায়। এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা এবং তার কর্মীদের দায়ী করেছেন ভুক্তভোগী নিজামুদ্দিন।

কারখানার মালিক ও যুবদলের সাবেক নেতা নিজামুদ্দিন গতকাল সাংবাদিকদের জানান, ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বুধবারের সংঘর্ষের জেরে রাতে তিন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে তাঁর কারখানায় ঢুকেছিলেন। সেখান থেকে কিছু সরঞ্জাম লুট করার পর তারা বেরোনোর আগে আগুন ধরিয়ে দেন। 

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, আগুন দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পুলিশের পরামর্শে তারা ‘সব ধরনের ঝামেলা’ থেকে দূরে রয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশের ওপর বুধবারের হামলায় আমরা চিন্তিত। তবে আগুন দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছি। দলীয় কার্যালয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি নেতার কারখানায় আগুন দেওয়ার সময় কোনো পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। কারা আগুন দিয়েছে বিষয়টিও জানা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে তদন্ত করা হবে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা না হলেও মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বিএনপির ২৫ জন কর্মীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

বুলুর ওপর হামলার ঘটনায় কুমিল্লার আদালতে মামলা : কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের বিপুলাসার এলাকায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলুর ওপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন বাদী হয়ে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৬ এ মামলাটি দায়ের করেছেন। পরে আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দিক মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ ও ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

সর্বশেষ খবর