মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইভিএমে কর্মকর্তার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

গোলাম রাব্বানী

ইভিএমে কর্মকর্তার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

ভোটারের ফিঙ্গার প্রিন্ট না মিললে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার নিজের ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ভোটের অনুমতি দিতে পারেন, ইসি ১ শতাংশ ভোটের কথা বললেও তা নিয়ে প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের, আরপিওতে স্পষ্ট করার উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন

ইসি চায় যাতে এই ক্ষমতার কোনো রকম অপব্যবহার না হয়।

আহসান হাবিব খান

নির্বাচন কমিশনার

ইলেকট্র্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার নিজের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে ইলেকট্রনিক ব্যালট (ই-ব্যালট) ইস্যু করতে পারেন। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন পরিপত্রের মাধ্যমে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে মোট ভোটারের ১ শতাংশ ভোটারকে ই-ব্যালট ইস্যুর ক্ষমতা দেয়। সর্বশেষ ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে ‘ইলেকট্র্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট গ্রহণ বিষয়ক বিশেষ পরিপত্র’র মাধ্যমে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। তবে নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়টি আইনে তথা আরপিওতে রাখার চিন্তা করছে। এ জন্য আরপিওর ২৬ ধারায়-ই উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবের খসড়ায় বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ভোটারকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বা সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার আঙুলের ছাপ দিয়ে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করতে পারবেন। গতকাল কমিশন সভায় এই প্রস্তাব তোলা হলেও তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে আরও বিশ্লেষণ করছে। এর আগে নির্বাচন কমিশন আরপিওর একটি সংশোধনী আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। যা বর্তমানে ভেটিংয়ে আছে। তবে ইসি অনুমোদন করলে আরপিওর নতুন এই সংশোধনী আগের সংশোধনী প্রস্তাবের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। অন্যদিকে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের ১ শতাংশ ই-ব্যালট ইস্যুর ক্ষমতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ১ শতাংশ ব্যালট ইস্যুর ক্ষমতা অনেক সময় অপব্যবহারের অভিযোগও উঠছে। এ ছাড়া ১ শতাংশ ভোটে অনেক প্রার্থীর জয়-পরাজয়ও হতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের ই-ব্যালট ইস্যুর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করছে। এ বিষয় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোনো প্রকৃত ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে ওই ব্যক্তির জন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ডিজিটাল ব্যালট ইউনিট চালু করে দিতে পারেন। কমিশন চায় যাতে এই ক্ষমতার কোনো প্রকার অপব্যবহার না হয় এবং সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত থাকে। কীভাবে করলে এই উদ্দেশ্য পূরণ হবে তা নিয়ে কমিশন আলাপ-আলোচনা করছে। এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা তথা প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের ১ শতাংশ ই-ব্যালট ইস্যুর ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই বলছেন, শুধু ১ শতাংশ নয়, কর্মকর্তা চাইলে যত খুশি তত ভোটারকে ই-ব্যালট ইস্যু করতে পারেন। তাই ১ শতাংশ ভোটারকে ভোটদানের অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা আইনে সুনির্দিষ্ট করা হলে বিতর্ক কমবে। কেউ কেউ বলছেন, আইনের মাধ্যমে মাত্র ১ শতাংশ ভোটারকে ভোটদানের অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা তথা ই-ব্যালট ইস্যুর করার ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করে দিলে অনেক ভোটার ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। কেননা গ্রাম-গঞ্জে ১ শতাংশের বেশি ভোটারের আঙুলের ছাপ নাও মিলতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করার আগে বিশ্লেষণ করা উচিত। ইসি মনে করছে- ই-ব্যালট ইস্যুর ক্ষমতা নির্ধারিত না করে উন্মুক্ত রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে যেখানে যত ভোটারের জন্য ই-ব্যালট ইস্যু প্রয়োজন হবে, কর্মকর্তারা তা প্রয়োগ করবেন। ই-ব্যালট ইস্যু সংক্রান্ত আলাদা একটি ফরম তৈরি করা হতে পারে। এই ফরমে কোন ভোটারের জন্য কোন কর্মকর্তারা নিজেদের আঙুলের ছাপ দিয়ে ব্যালট ইস্যু করেছেন তা লেখা থাকবে। ওই ফরমে প্রার্থীদের এজেন্টদেরও স্বাক্ষর থাকবে। এমনকি ফলাফল প্রিন্ট কপির পাশাপাশি এই তথ্য প্রার্থীর এজেন্টকে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে এই ফরমের কপি সিলগলা করে রাখার ব্যবস্থাও থাকবে।

সর্বশেষ খবর