মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
আপিল বিভাগের রায়

ভূমির কুতুবকে জামিন সিদ্ধান্ত ছিল ন্যায়ভ্রষ্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্বশুরসহ কয়েকজন আত্মীয়ের নামে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করে আত্মসাতের ঘটনায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন আহমেদকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ ন্যায়সংগত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদালত বলেছেন, এ জামিনের সিদ্ধান্ত ছিল অবিবেচনাপ্রসূত ও ন্যায়ভ্রষ্ট। কুতুব উদ্দিনকে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ বাতিল করে ৩১ আগস্ট বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, শুধু বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দণ্ডিত অপরাধীকে জামিন দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে অপরাধের গভীরতা বিবেচনা করতে হবে। রায়ে আদালত বলেছেন, জামিন দেওয়ার বিষয়টি আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। অপরাধ জামিনযোগ্য হলে বিচারাধীন আসামির জামিন নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ অজামিনযোগ্য হলে অসুস্থ ও জরাগ্রস্ত বন্দি, নারী ও শিশুর জামিন বিবেচনা করার সুযোগ আদালতের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিচারাধীন ও দণ্ডিত আসামির জামিন মঞ্জুরের বিষয়টি পুরোপুরি ভিন্ন। একসঙ্গে মেলানোর সুযোগ নেই। যখন কোনো মামলায় যুক্তির বাইরে গিয়ে হাই কোর্ট জামিনের সিদ্ধান্ত দেন, তখনই আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেন।

রায়ে বলা হয়, ‘বর্তমান মামলায় আসামির আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত থাকার পরও শুনানি না করে আসামিকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট, যা ন্যায়সংগত হয়নি। হাই কোর্টের উচিত ছিল, যেহেতু আসামির আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত, সেহেতু দ্রুত আপিল নিষ্পত্তি করা। কিন্তু তা না করে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জামিন আদেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। এ কারণে আমরা মনে করি হাই কোর্টের জামিনের সিদ্ধান্ত ছিল অবিবেচনাপ্রসূত ও ন্যায়ভ্রষ্ট। সে জন্য ওই জামিন আদেশ বাতিল করা হলো।’

ভুয়া আমমোক্তারনামার মাধ্যমে গুলশানে ১০ কাঠার প্লট আত্মসাতের মামলায় চলতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর ১৬ মার্চ নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে কুতুবের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাই কোর্ট। পরে ১৪ জুলাই তাকে ছয় মাসের জামিন দেন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। হাই কোর্টের এ জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। পরে কুতুব উদ্দিন আহমেদকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বাতিল করে ৩১ আগস্ট রায় দেন আপিল বিভাগ।

২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান থানায় কুতুব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কুতুব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও ভুয়া আমমোক্তারনামার মাধ্যমে গুলশানে ১০ কাঠার একটি প্লট তার শ্বশুরসহ কয়েকজনের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন।

 

 

সর্বশেষ খবর