বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিনিয়োগ চাইলে গণতন্ত্র সুশাসন নিশ্চিত করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিনিয়োগ চাইলে গণতন্ত্র সুশাসন নিশ্চিত করুন

পিটার ডি হাস

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ চায়। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে কী চায়- সেদিকে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, আপনি যদি বিনিয়োগ চান, তবে আপনাকে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার, স্বচ্ছতা এবং শ্রম পরিবেশ- এই বিষয়গুলো  নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তাদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে বলেও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। গতকাল রাজধানীর এক হোটেলে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, বাংলাদেশ (আইবিএফবি)-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এ দেশের বেশির ভাগ জনগণ তরুণ ও প্রাণবন্ত। এর ফলে জনমিতির একটা সুবিধা বাংলাদেশ পাচ্ছে। গত কয়েক দশকে এখানে প্রচুর মধ্যবিত্ত শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছে- যা বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করছে। নানা সংকটেও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। করোনা মহামারির পরও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতে আগামী বছর বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের এসব সম্ভাবনাকে বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ হিসেবে তুলে ধরতে চাইলে দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর জোর দিতে হবে বলে মনে করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়তে সরকারের সব পর্যায়ের সিদ্ধান্তে আরও বেশি বেশি স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। একটি বিনিয়োগকারী কোম্পানি নিরাপত্তা চায়; কারণ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নির্বাচনী অস্থিতিশীলতা তাদেরকে ভীত করে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য শুধু ‘অর্থনৈতিক জোন’ করাই যথেষ্ট নয়। এসব জোনে পানি, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধের মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন রয়েছে। তারা করকাঠামোর সংস্কার, সহজে মুনাফা নেওয়া এবং নীতির ধারাবাহিকতার মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায়। ব্যবসা সহায়ক পরিবেশের জন্য সংস্কারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে যে পাঁচটি মৌলনীতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল- সেই নীতিগুলো তুলে ধরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রথমত, আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ চাই; দ্বিতীয়ত, এটি এমন একটি বাংলাদেশ যা গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, বহুত্ববাদ, সহনশীলতা, সুশাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; তৃতীয়ত, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে সহনশীল বাংলাদেশ; চতুর্থত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা, যতক্ষণ পর্যন্ত বার্মায় তাদের নিরাপদ, ঐচ্ছিক এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন সম্ভব না হয়। পঞ্চম লক্ষ্যটি দেশের টেকসই অর্থনীতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি অর্জন, শ্রম মানের উন্নয়ন, অর্থনীতির সম্প্রসারণ ও রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন করা ও এটিকে বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সংযোগের জন্য উন্মুক্ত করা। রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সব ক্ষেত্রে আমি নিশ্চিত যে, আমরা অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে আরও দ্রুততার সঙ্গে বহুদূর যেতে পারি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ। আর আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর প্রতিনিধি দলের প্রধান, রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলিও গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের মতো বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি তৈরি পোশাক নির্ভর; এটা বাংলাদেশের শক্তির জায়গা, দুর্বলতা নয়। তারপরও বিশ্ববাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতার জন্য রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি, ওষুধ শিল্পের মতো সম্ভাবনাময় খাতগুলোর রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

আইবিএফর এজিএম-এ সূচনা বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন রশীদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ (পিআরআই)-এর চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার। ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, সংগঠনের কার্যক্রম তুলে ধরেন আইবিএফর সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকী। অতিথিদের ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানান সংগঠনের সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান খান, সহসভাপতি লতিফুন্নেসা সাউদিয়া খান এবং সংগঠনের চট্টগ্রাম চাপ্টারের সভাপতি আবু তৈয়ব।

সর্বশেষ খবর