রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

চার অঞ্চল নিয়ে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা তুঙ্গে

প্রতিদিন ডেস্ক

ইউক্রেনের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া চারটি ভূখন্ডকে রাশিয়া নিজেদের ফেডারেশনভুক্ত করার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব ছাড়াও পশ্চিমা জোটভুক্ত দেশগুলো আরও কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ অন্যতম। অন্যদিকে রাশিয়া বলেছে, রুশ ফেডারেশনে নতুন অন্তর্ভুক্ত ভূখন্ডে পশ্চিমা পক্ষের যে কোনো হামলাকে রাশিয়ার ওপর হামলা বলে বিবেচনা করা হবে এবং রাশিয়া সেই মতো পাল্টা আঘাত হানবে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার পথে রয়েছে। এ অবস্থায় এক অভিযান চালিয়ে রুশ সেনারা ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়ায় অবস্থিত ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রের প্রধান ইহোর মুরাশভকে আটক করেছে। ইউক্রেন বলেছে, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, এপি।

ইহোর মুরাশভকে আটক করার বিষয়ে কিয়েভের পারমাণবিক কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে কেন্দ্রের মহাপরিচালক ইহোর মুরাশভকে আটক করে রুশ বাহিনী। অন্যদিকে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয়েছে, রুশ সেনারা তাকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া, খেরসন, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে মস্কোর সঙ্গে সংযুক্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই অপহৃত হন ইহোর মুরাশভ। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক কোম্পানি এনারগোটমের প্রেসিডেন্ট পেট্রো কোটিন বলেন, ‘ইহোর মুরাশভেরর গাড়ি থামিয়ে চোখ বেঁধে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় রুশ সেনারা। রাশিয়া তাকে আটক করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছে।’ মুরাশভকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানান কোটিন।

তবে ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রের পরিচালককে অপহরণ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি মস্কোর। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে নামার পর জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে হামলা চালায় রুশ বাহিনী। এক পর্যায়ে নিজেদের দখলে নেয়। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা নেতারা স্পর্শকাতর কেন্দ্রটি থেকে রাশিয়ার  সেনাবাহিনীকে দূরে থাকার আহ্বান জানালেও তাতে কাজ হয়নি।

নতুন নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের : রাশিয়ার ওপর নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিতর্কিত গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রুশ ভূখন্ড হিসেবে ঘোষণার পর এই নিষেধাজ্ঞা দিল ওয়াশিংটন। খবরে বলা হয়, রাশিয়ার সমরাস্ত্র শিল্প কমপ্লেক্স, দুটি আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, আর্থিক খাতের প্রধান তিনজন নেতা এবং কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের এবারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া রুশ পার্লামেন্টের ২৭৮ জন সদস্যের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার বাইরে থেকে রুশ বাহিনীকে সহায়তা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। একই সঙ্গে ইউক্রেনীয় ভূখন্ডকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার প্রচেষ্টায় যারা সমর্থন দেবে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেবে ওয়াশিংটন।

দ্রুত ন্যাটোভুক্তি চান জেলেনস্কি : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশকে দ্রুত সময়ের মধ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোভুক্ত করার আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছেন। তিনি এক  টেলিগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে মিত্রতার মানদন্ডের সঙ্গে আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছি। ন্যাটোতে দ্রুত যোগ দিতে ইউক্রেনের আবেদনে স্বাক্ষর করে আমরা দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

পুতিনের সঙ্গে বাহরাইন বাদশাহর ফোনালাপ : সম্পর্ক জোরদার এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে  ফোনালাপ করেছেন বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা। শুক্রবার এই দুই নেতার মধ্যে ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। এমন এক সময় দুই  নেতার মধ্যে ফোনালাপ হয়, যখন ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা করেছেন পুতিন।

বাহরাইন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়।  বাহরাইনের বাদশাহর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন পুতিন। এ সময় সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় (এসসিও) যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন বাহরাইনের বাদশাহ।

চার অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া পশ্চিমাদের ব্যর্থতা : সামরিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়া নিজেদের ফেডারেশনভুক্ত করে নেওয়ার ঘটনা পশ্চিমাদের ব্যর্থতার ফল। তারা হুমকি দিয়ে এবং মিত্র ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সামরিক সহায়তা দিয়েও রাশিয়ার এই উদ্যোগকে ঠেকাতে পারেনি। তারা আরও বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ইউক্রেনে রাশিয়ার লক্ষ্য অর্জনে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারা বাধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিমারা এ পর্যন্ত ২৫ বিলিয়ন ডলারের বিচিত্র অস্ত্র দিয়েছে ইউক্রেনকে। আমেরিকা এবং ন্যাটো ভেবেছিল ওসব অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে ইউক্রেনের সেনারা যুদ্ধ পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারবে। বিশেষ করে মস্কোকে পিছু হটাতে পারবে। কিন্তু কার্যত ন্যাটো কিংবা আমেরিকা কিছুই করতে পারল না। মস্কো তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে। অবশ্য ন্যাটো প্রধান স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘তবুও এই সামরিক জোট কোনোভাবেই রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমাদের ওপর নির্ভর করে ইউক্রেনীয়দের আসলেই চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।

সর্বশেষ খবর