সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

দখলবাজদের নানা কৌশল

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

দখলবাজদের নানা কৌশল

রাজশাহীতে রেলের জমি দখল করে ভবন

দেশের অন্যতম বৃহত্তম রেলওয়ে এলসি স্টেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর। এ রেলস্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে উন্নীত করার দাবিতে দীর্ঘদিন চলছে আন্দোলন। তবে এ দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের অনেকেই অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন স্টেশনের জায়গা। সম্প্রতি আরও বেড়েছে অবৈধ দখলদারদের তৎপরতা।

নীলফামারীর সৈয়দপুর। এখানে সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করে আছে পৌরসভা। নাটোরের নলডাঙ্গায় রেলের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছিল মার্কেট। সেটি বুধবার গুঁড়িয়ে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এরপরও বিভিন্ন এলাকায় রেলের বেদখলি সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার একর। এর মধ্যে পাকশী বিভাগে দখলের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এখানে দখলে আছে ২ হাজার ৬১.৮২৪৯ একর। লালমনিরহাট বিভাগে অবৈধ দখলে থাকা সম্পত্তির পরিমাণ ৩৫৯ দশমিক ৭৪ একর। পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম তালুকদার জানান, অবৈধ দখলে থাকা রেলের ভূমিতে অনেকে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। সেগুলো আইনগতভাবে ও অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ের সব জমি আধুনিক ব্যবস্থাপনায় আনতে ২০০৭ সালে জরিপের কাজ দেওয়া হয় শেলটেক কনসালট্যান্ট লিমিটেডকে। ২০১৪ সালে তারা রেলওয়েকে জরিপের প্রতিবেদন জমা দেয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের দুই অঞ্চলে নথিপত্রে ৬১ হাজার ৮৬০ একর জমি থাকলেও শেলটেকের জরিপে পাওয়া গেছে ৫৯ হাজার ৭৫৫ একর জমি। ১ হাজার ৮৪১ একর জমির দলিল বা আনুষঙ্গিক নথিপত্র পাওয়া যায়নি। সূত্র জানায়, দখলবাজরা রেলের ১ হাজার ৮৪১ একর জমির দলিল, পর্চা ও নথি গায়েব করে দিয়েছে। আর এই নথি গায়েবকান্ডে জড়িত বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ, রেল ভবন থেকে শুরু করে পূর্ব ও পশ্চিম রেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ সুযোগে কৌশলে দখলবাজরা নিজেদের নামে রেলওয়ের এসব জমি রেকর্ড করে নিয়েছেন। তথ্যানুসারে, রেলের পাকশী বিভাগে সর্বাধিক জমি দখল করেছেন দখলবাজরা। এ বিভাগে ২৭ হাজার একর জমির মধ্যে দখল করা হয়েছে ২ হাজার একর। লালমনিরহাট বিভাগে ১০ হাজার ৮৯৮ একর জমির মধ্যে দখল হয়েছে ৩৫৯ একর।

পশ্চিম রেলের সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রেজুয়ানুল হক জানান, পাকশী বিভাগে রেলের সর্বাধিক জমি দখল হয়েছে সৈয়দপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী ও পার্বতীপুরে। এসব এলাকায় দখলকারী ১১ হাজার। ১৭টি অভিযানে ১ হাজার ৮০০ একর জমির ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। জমি উদ্ধার করা হয়েছে ১৪৫ একর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, মনে হচ্ছে সৈয়দপুর, পার্বতীপুরে যেন রেলের জমি দখলদারদের লিখে দেওয়া হয়েছে।

নাটোরের মাধনগর রেলস্টেশন বাজার এলাকায় রেলের জলাশয় ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। পাঁচ তলা ফাউন্ডেশনের মার্কেট ভবনটির এক তলা নির্মাণ শেষ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য রূপপুর মোড়, ঈশ্বরদী জংশন, ঈশ্বরদীর নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল, পাকশী রেল বিভাগের সদর দফতরসহ বিভিন্ন স্থানে রেলের ২০০ একর জমি প্রয়োজন। অথচ এ পর্যন্ত দখলমুক্ত করা গেছে ৬০ একর জমি। এর মধ্যে ঈশ্বরদী রেল জংশন এলাকায় উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ একর। পশ্চিম রেলের এস্টেট দফতর সূত্রে জানা যায়, উত্তর পশ্চিম মধ্য অঞ্চলের ২৭টি জেলায় পশ্চিম রেলওয়ের ৩৭ হাজার ৪১৯ দশমিক ৩৫ একর জমি ছড়িয়ে আছে। রেলের পশ্চিম জোনে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ মিলিয়ে ২৪৪টি স্টেশন আছে। বেশির ভাগ রেললাইন ও স্টেশন ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। ব্রিটিশ আমলে জমি অধিগ্রহণ করে রেললাইন ও স্টেশন নির্মাণ করা হয়। রেললাইনের দুই পাশ ও স্টেশনের আশপাশে রেলের প্রচুর জমি আছে। এসব জমির ওপর এলাকার ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের নজর পড়ে। তারা একটু একটু করে জমি দখল শুরু করে। খুলনা, যশোর, পোড়াদহ, ঈশ্বরদী, সান্তাহার, পার্বতীপুর, সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, বনারপাড়া ও রাজবাড়ী জংশন স্টেশনের আশপাশ এলাকায় রেলের বেশি জমি বেদখল হয়ে আছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর