সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

রক্তাক্ত খেলার মাঠ

ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল খেলা নিয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও পদপিষ্ট হয়ে নিহত ১৯০

প্রতিদিন ডেস্ক

রক্তাক্ত খেলার মাঠ

ইন্দোনেশিয়ায় খেলার মাঠে দুই পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষ। স্বজনহারাদের আহাজারি

ইন্দোনেশিয়ায় একটি ফুটবল ম্যাচে জয়-পরাজয় নিয়ে দুই পক্ষের মারামারির সময় পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ শুরু হলে ভিড়ের চাপ এবং পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে অন্তত ১৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। অবশ্য সরকারিভাবে বলা হয়েছে, নিহতের সংখ্যা ১২৫ এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৩০০ জন। হতাহতদের মধ্যে পুলিশও রয়েছে। ত্রিমুখী এ সংঘর্ষের পর দেশটিতে শীর্ষ লীগের সব ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। বিবিসি, রয়টার্স।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, পূর্ব জাভা প্রদেশের মালাং শহরে গত শনিবার রাতের ফুটবল ম্যাচটিতে স্বাগতিক দল পরাজিত হওয়ার পর এর সমর্থকরা মাঠে নেমে এলে সংঘর্ষের সূত্রপাত। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, খেলায় পার্সিবেয়া সুরাবায়া টিমের কাছে হেরে যায় আরমেয়া এফসি। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ভক্ত-সমর্থকরা। শেষ বাঁশি বাজার পরপরই তারা নেমে আসেন মাঠে। জড়িয়ে পড়েন সংঘাতে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ শুরু করে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ লোকজনের হামলায় ১০টি পুলিশের গাড়িসহ ১৩টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশের দাবি, ৪ হাজার দর্শকের মধ্যে ৩ হাজার দর্শকই ম্যাচের পরে মাঠে নেমে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন। পরে গতকাল এ ঘটনায় পুলিশ প্রধান নিকো আফিন্তা এক সংবাদ সম্মেলনে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এ মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি এবং শোক প্রকাশ করছি। নিহতদের মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, হাজার হাজার দর্শক একসঙ্গে স্টেডিয়ামে জোর করে ঢুকে পড়ে এবং পরস্পরের মধ্যে হুড়োহুড়ির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এর ফলে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে অনেকে মারা যান। দাঙ্গার এ ঘটনায় ইন্দোনেশিয়ার সব ফুটবল লীগ এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে এবং আরেমাকে বাকি মৌসুমের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, খেলা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে আরেমা দলের সমর্থকরা মাঠে নেমে আসার পর তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং এক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুরো মাঠ এবং এলাকায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং নিরীহ লোকজন প্রাণভয়ে দিগি¦দিক ছুটতে থাকেন। এ সময় ভিড়ের চাপে বহু মানুষ মাটিতে পড়ে যান এবং তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। একপর্যায়ে নামেন সেনা সদস্যরা। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আরও অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। এদিকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ লীগের সব ধরনের ম্যাচ স্থগিতের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট জকো উইদোদো। প্রসঙ্গত, গত কয়েক দশকের মধ্যে কোনো ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনাকে ‘বড় ধরনের সহিংসতা’ বলা হচ্ছে। এর আগে ১৯৬৪ সালে লিমাতে পেরু-আর্জেন্টিনা অলিম্পিক বাছাই পর্বের সময় পদদলিত হয়ে ৩২০ জন নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামেও নিহত হন ৩৯ এবং আহত হন ৬০০ জন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর