বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

এখনো অবহেলিত শিক্ষকরা

বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ

আকতারুজ্জামান

নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আদর্শ মানুষ গড়তে নিরন্তর কাজ করলেও এখনো বেতনবঞ্চিত হাজার হাজার শিক্ষক। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নন-এমপিও শিক্ষকরা সরকার থেকে এখনো কোনো বেতন-ভাতাই পান না। আর নামে মাত্র ভাতা পাচ্ছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। সরকার থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাওয়া এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও প্রতি মাসে মাত্র ১ হাজার টাকা বাসাভাড়া আর ৫০০  টাকা চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। সরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা কিছুটা সম্মানজনক বেতন-ভাতা পেলেও তারাও নানাভাবে অবহেলিত হচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতেই আজ ৫ অক্টোবর সারা দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘শিক্ষার রূপান্তর শুরু হয় শিক্ষকদের মাধ্যমে’। শিক্ষকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে ইউনেস্কোর মাধ্যমে সারা বিশ্বের ১০০ দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

তথ্যমতে, দেশের সরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। পদ সৃজনে সমস্যা, সময়মতো পদোন্নতি না হওয়া, অন্য ক্যাডারের সঙ্গে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি না হওয়াসহ নানা সমস্যায় রয়েছেন এই ক্যাডাররা। শিক্ষা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ। এ পদটি প্রথম শ্রেণি পদমর্যাদার। সরকারি কলেজের অধ্যাপকদের এ পদে পদায়ন করা হয়। কিন্তু সরকারি কলেজের অধ্যাপকদের পদ চতুর্থ পদমর্যাদার। চতুর্থ আর প্রথম শ্রেণির মাঝামাঝি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কোনো পদ নেই। এতেও নানা বিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছেন ক্যাডার শিক্ষকরা। দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সরকার বেতন ও ভাতা দিয়ে থাকে। চলতি বছরও ২ হাজার ৭১৬টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রায় ৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বাইরে রয়ে গেছে। এমপিও না হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা কোনো বেতন বা ভাতাই পাচ্ছেন না সরকার থেকে। খুলনা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ও নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘২২ বছর ধরে বিনা বেতনে পাঠদান করে আসছি। নন-এমপিও শিক্ষকরা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। শিক্ষকদের বেতন না দিয়ে দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না।’ অবিলম্বে দেশের সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি জানান তিনি।

সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৩৫০টি এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজে নন-এমপিও অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ৫ হাজার। জানা গেছে, এই শিক্ষকদের বার্ষিক বেতন-ভাতা বাবদ খরচ হবে ১৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় দীর্ঘ ২৮ বছরেও জনবলকাঠামো তৈরি না করায় অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এসব শিক্ষক-কর্মচারী সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। দেশে এখনো অনেক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের বাইরে রয়ে গেছে। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মহাবিপদে আছেন। দেশে বর্তমানে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। এসবের মধ্যে ১ হাজার ৫১৯টির প্রধান শিক্ষক মাত্র আড়াই হাজার টাকা অনুদান পান সরকার থেকে। জুনিয়র শিক্ষক ও জুনিয়র মৌলভিরা অনুদান পান মাত্র ২ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু বাকি ২ হাজার ৭৯৩টি মাদরাসার শিক্ষকরা সরকার থেকে কোনো বেতন বা অনুদান পান না। বৃহৎ অংশের শিক্ষকরা এ ভাতা থেকে বঞ্চিত। এ শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন-ভাতার আওতায় আনার ব্যাপারে কয়েক বছর ধরে আলোচনা থাকলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর