বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

দলীয় সংঘাতে ৩ জেলায় হামলা

শরীয়তপুর ও ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতাসহ আহত ২১, কুমিল্লায় উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাংচুর, গুলি

প্রতিদিন ডেস্ক

জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহ এবং শরীয়তপুরে দলীয় হাঙ্গামায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন।

আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন দুজন। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনোনীত প্রার্থী কনক কান্তি দাস এবং সদর পৌর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত সহ-সভাপতি ড. এম হারুন অর রশীদ। নির্বাচনে পুরুষ সদস্য পদে ২২ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদিকে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেল ভাঙচুর, একে অপরের সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে গতকাল মাথা ফাটানোসহ ১১ জন কর্মীকে পিটিয়ে আহত করা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরসহ ভয়ভীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী ও সৃজনী এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা ড. এম হারুন অর রশীদ। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এমনকি মারধর করা হচ্ছে, অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ভোট চাইতে নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এসব ঘটনার প্রমাণসহ থানায় বেশ কয়েকটি জিডি এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের  হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’  শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, ডামুড্যায় পূজা মন্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে অন্য পক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীমসহ ১০ জন। এ সময় বহরে থাকা চারটি গাড়িও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার রাতে ডামুড্যা পৌরশহরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আবদুল আউয়াল শামীমের সঙ্গে থাকা শরীয়তপুর জেলা শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি সজল সিকদারও আহত হন।

এ বিষয়ে ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর মাঝি জানান, গোসাইরহাট উপজেলা থেকে পূজা মন্ডপ পরিদর্শন শেষে রাত ৯টার দিকে ডামুড্যা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর মাঝির অফিসে নেতা-কর্মীসহ নৈশভোজ করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। এ সময় ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জুলহাস মাদবরসহ ১৫-২০ জন লোক হামলা চালায়। হামলায় সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম ও জেলা শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি সজল সিকদারসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। হামলাকারীরা উপজেলা চেয়ারম্যান কার্যালয় ভাঙচুর করে এবং নেতাদের গালিগালাজ করে। এ ছাড়াও অফিসের নিচে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করে।

এ বিষয়ে ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফ আহমেদ বলেন, বিষয়টি শোনার পর দ্রুত সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সেখানে কিছু চেয়ার আর গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে। কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুর, গুলি : কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, পূজামন্ডপ পরিদর্শনের সময় দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ সোমবার হামলার শিকার হয়েছেন। তার ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর ও সরকারি গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। পৌরসভার ভিংলাবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত পাঁচজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে ভিংলাবাড়ি এলাকার মো. সজীব মিয়াকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদ কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও রয়েছেন। তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে পৌরসভার আলিয়াবাদ এলাকায় পূজামন্ডপ দেখতে যান। একই সময়ে স্থানীয় এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলও তার নেতা-কর্মীদের নিয়ে একই এলাকায় পূজামন্ডপ দেখতে আসেন। বহরের গাড়ি রাখা নিয়ে উভয়ের নেতা-কর্মীদের বাগ্বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উপজেলা চেয়ারম্যান তার গাড়িবহর নিয়ে পৌরসভার ফতেহাবাদ এলাকার পূজামন্ডপ পরিদর্শন শেষে ভিংলাবাড়ি এসে স্থানীয় এক নেতার বাড়িতে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় এমপি রাজী ফখরুলের গাড়িবহর আলিয়াবাদের মন্ডপ পরিদর্শন শেষে ফতেহাবাদ এলাকার অন্য আরেকটি মন্ডপে যাওয়ার পথে এমপির নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেল থেকে আবুল কালাম আজাদ ও তার নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে আপত্তিকর স্লোগান দিলে আজাদের নেতা কর্মীরাও পাল্টা স্লোগান দেন। এ সময় আজাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। আজাদ গাড়ি থেকে বের হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তার ওপরও হামলা চালানো হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এমপি রাজী ফখরুলের নেতা-কর্মীরা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আলিয়াবাদ এলাকায় আমার নেতা-কর্মীদের মারধর করতে থাকে। আমি থামাতে গেলে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সৌভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই। আমার ৫/৬ জন নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে। এমপি রাজীর লোকজনও অভিযোগ করেন যে চেয়ারম্যানের লোকরা তাদের ওপর হামলা করেছে। সংসদ সদস্য রাজী ফখরুলকে ফোন করলে তিনি বলেন, আমি ব্যস্ত আছি পরে কল করুন। পরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, আমরা তদন্ত করছি। তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে।

সর্বশেষ খবর