বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ডিসেম্বরের মধ্যে অবসরে যাচ্ছেন ১০ সচিব

উবায়দুল্লাহ বাদল

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়মিত চাকরি শেষে অবসরে যাচ্ছেন দুজন সিনিয়র সচিবসহ আটজন সচিব। এই সময়ের মধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবেরও। ফলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ ও জনপ্রশাসন সচিবসহ ১২ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদ খালি হচ্ছে। এসব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে ইতোমধ্যে কেউ কেউ দেন-দরবার শুরু করেছেন বলে আভাস মিলেছে। তবে দেন-দরবার ফলপ্রসূ হবে কি না, তা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর। চুক্তিভিত্তিক না হলে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ১৯৮৫, ১৯৮৬, নবম, দশম ও একাদশ ব্যাচের উপযুক্ত কর্মকর্তাদের এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এদিকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিসিএস ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ তারাও সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। দুইশর বেশি কর্মকর্তার এই ব্যাচ ইতোমধ্যে সচিব পদে নিয়োগ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে তাদের মধ্য থেকেও সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আশা করছেন ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তারা। তবে প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার প্রশাসনের শীর্ষপদগুলোতে নিয়োগ ও পদায়ন হবে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সাজানো হবে প্রশাসন। কারণ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে এই প্রশাসনের। সে মতে প্রশাসনের শীর্ষপদ এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে চাকরি জীবনের যাবতীয় তথ্য-উপাত্তের নতুন করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাদের গ্রামের বাড়িসহ আত্মীয়-স্বজনদের রাজনৈতিক পরিচয়েরও (যদি থাকে) খবর নেওয়া হচ্ছে। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই এবারের সচিব পদ পূরণ করা হবে বলে জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্যমতে, এ মুহূর্তে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব/সচিব পদমর্যাদায় চুক্তিসহ কর্মরত ৮৫ জন কর্মকর্তা। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংখ্যা ৭৬। তাদের মধ্যে বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ও স্পেশাল ব্যাচের একজন করে, ১৯৮৪ ব্যাচের চারজন, ১৯৮৫ ব্যাচের দুজন, ১৯৮৬ ব্যাচের ১১ জন, বিসিএস নবম ব্যাচের ১১ জন, দশম ব্যাচের ২৫ জন এবং একাদশ ব্যাচের ২১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্যসচিবসহ ১২ জনই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত। চলতি বছরের আটজন সচিবের পাশাপাশি আগামী বছর (২০২৩) অবসরে যাবেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আরও ২৬ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে। ৩০ অক্টোবর অবসরে যাবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, ২ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম এবং ১৩ নভেম্বর ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার। এ ছাড়া আগামী ৩১ ডিসেম্বর পাঁচজন সচিব অবসরে যাবেন। তারা হলেন- পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. মামুন আল রশিদ, বিপিএটিসির রেক্টর রামেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এম খলিলুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এম সাইদুল ইসলাম এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব এম মোকাম্মেল হোসেন। সূত্র জানায়, এসব পদ খালি হওয়ার আগেই কোনো কোনো সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। চুক্তিপ্রত্যাশী অনেকে এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের দফতরে হাজিরা দেওয়া শুরু করেছেন। তবে প্রশাসনের বড় একটি অংশই এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করছে। এই পক্ষের কর্মকর্তারা নিজেরাই সচিব হওয়ার দৌড়ে আছেন। দশম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পর ইতোমধ্যে একাদশ ব্যাচের ২১ জন কর্মকর্তা সচিব হয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে হয়তো এই ব্যাচসহ দশম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব নিয়োগ দেওয়া হবে। গত মাসেই বিসিএস ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা সচিব হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। আগে প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব পদে এক বছর কাজ করার পর ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। এখন তা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত সচিব পদে দুই বছর অতিক্রম করার পর সরাসরি সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রায় অভিন্ন ভাষায় একাধিক অতিরিক্ত সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা সচিব পদে দীর্ঘদিন রয়েছেন তাদেরই আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে আমরা কবে সচিব হব? সব অতিরিক্ত সচিব সচিব হবেন না যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য একটি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব বঞ্চিত হন। কারণ চুক্তিতে একজনকে দুই বছরের জন্য দিলে এ সময়ে কতজন অতিরিক্ত সচিবের চাকরির মেয়াদ শেষ হয় তা-ও নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে নিয়মিত কর্মকর্তারা কাজ করার সুযোগই পাচ্ছেন না। যারাই বড় পদে গেছেন তারাই নিজেদের আখের গুছিয়ে চুক্তি বাগিয়ে নিয়েছেন। যোগ্য কর্মকর্তারা নন, গুটিকয় বড় কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠরাই এখন সচিব হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।

সর্বশেষ খবর