বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
আবরার হত্যার তিন বছর

অপেক্ষা হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তির

আরাফাত মুন্না

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিতে ছাত্রলীগের অভিযুক্ত ২৫ নেতা-কর্মীর মধ্যে ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে রায় দিয়েছেন বিচারিক আদালত। মামলাটি এখন ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড অনুমোদন) শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে হাই কোর্টে। ডেথ রেফারেন্স শুনানিতে               সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু এ মামলার পেপারবুক (রায়সহ মামলার যাবতীয় নথি-সংবলিত বই) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরি করতে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে অনুরোধ করেছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে শুনানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

আবরার ফাহাদ তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর পরই জানা যায় ঘুমন্ত আবরারকে নিজের কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ‘শিবিরের কর্মী’ সন্দেহে ছাত্রলীগের একদল উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মী তাকে হত্যা করেন। এরপর লাশ ফেলে রাখা হয় হলের সিঁড়ির করিডরে, যা সিসিটিভি ফুটেজেও ধরা পড়ে। এর পরই এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। পরদিন রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এরপর একই বছর ১৩ নভেম্বর এ মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর ৮ ডিসেম্বর চাঞ্চল্যকর এ মামলায় রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি বিধি অনুযায়ী ২০ আসামির মৃত্যুদন্ড অনুমোদন-সংক্রান্ত ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে পাঠানো হয়। দন্ডপ্রাপ্ত ২৫ আসামির মধ্যে তিনজন এখনো পলাতক বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আবরার হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি আপিল ও জেল আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল একসঙ্গেই শুনানি হবে। তিনি বলেন, ‘শুনানির জন্য কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় পেপারবুক তৈরি হওয়া। পেপারবুক তৈরির দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করতে আমরা সুপ্রিম কোর্টকে বলেছি। এখন পেপারবুক প্রস্তুত হলেই শুনানির উদ্যোগ নেওয়া যাবে।’

জানা গেছে, আইন অনুযায়ী কোনো মামলায় নিম্ন আদালত থেকে দেওয়া মৃত্যুদন্ড হাই কোর্টের অনুমোদন ছাড়া কার্যকরের সুযোগ নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী হাই কোর্টের অনুমোদন নিয়ে মৃত্যুদন্ডের সাজা কার্যকর করতে হয়। এ কারণে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে এমন মামলার নথিপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয় হাই কোর্টে। এসব মামলাই হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নিবন্ধন হয়। দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল বা জেল আপিলও ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গেই শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ২০১৭ সালে নিবন্ধন হওয়া ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি হচ্ছে হাই কোর্টে। একই সঙ্গে হাই কোর্ট বিভাগে প্রায় সাড়ে ৮০০ ডেথ রেফারেন্স মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনীক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি, মো. শামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ। এদের মধ্যে মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক। যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না।

সর্বশেষ খবর