বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নিত্যপণ্যের বাজারে তদারকি জোরদারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিত্যপণ্যের বাজারে তদারকি জোরদারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের বাজার তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা উচিত। এর জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তা করব। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি একথা বলেন। একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় অংশগ্রহণ করেন। একনেক সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বৈঠক সম্পর্কে ব্রিফ করেন।  মন্ত্রী জানান, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক  প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে বলেছেন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশবাসীকে আরও খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় আগামী বছরে একটি গভীর সংকটের আশঙ্কা করছে। তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এটি এখন আমাদের জন্য অনিবার্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গতকাল সকালে একনেক সভার প্রারম্ভিক বক্তব্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সাম্প্রতিক সফরের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেছেন, বিশেষ করে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়, যেখানে সকলেই অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ২০২৩ সালে একটি গুরুতর দুর্ভিক্ষ হতে পারে যখন অর্থনৈতিক মন্দা আরও গভীর হবে এবং খাদ্য সংকট দেখা দেবে। শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে অনেক দেশে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সুতরাং আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেই সাথে খাদ্যকে প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের একটা সুবিধা আছে যে আমাদের জমি অনেক উর্বর এবং যেখানে বীজ বপন করা হয় সেখানে কিছু উৎপন্ন হয়। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা কোন অপ্রয়োজনীয় খরচ বাড়াব না, বরং আমরা বিদ্যুৎ, জ¦ালানি, পানি, গ্যাস ইত্যাদি ব্যবহারে আরও সাশ্রয়ী এবং সচেতন হবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কোনো কিছুই অপ্রয়োজনে ব্যবহার করতে যাবে না। আমরা যা প্রয়োজন তা ব্যবহার করব, এর বেশি নয়। আমাদের অপ্রয়োজনীয় কোন কিছু ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমি বিশ্বনেতা ও সংস্থার প্রধানদের মধ্যে উদ্বেগ দেখেছি। তাই আমাদের যথেষ্ট সতর্কতামূলক পদক্ষেপ বজায় রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনা করে মূল্যবান সময় ক্ষেপণ না করার জন্য পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, কারণ, বিশ্বের অনেক দেশই এই বিষয়ে আলোচনা করে না। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো মূল্যস্ফীতির বিষয়ে অনেক বেশি আগ্রহ দেখালেও তাদের নিজেদের দেশে বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করে না। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ নির্বাহী পদক্ষেপ ও নীতিগত পদক্ষেপের মাধ্যমে করা যায়। আমরা ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্যের উপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) উঠিয়ে দিয়েছি, আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত কথা বলছেন। একইসাথে প্রয়োজন হলে বাজার অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এম এ মান্নান আরও বলেন, ১ কোটি পরিবারকে কম মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ৪ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছেন। সরকারের এসব সার্বিক পদক্ষেপের কারণে চাল, ভোজ্যতেলসহ আরও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, চলতিবছরের আগস্ট মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, সেটি সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে। রোপা আমনের ভাল ফলন হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সার্বিক মূলস্ফীতি কমতির দিকে এবং সামনে আরও কমবে। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে তিনি আরও বলেন, বিদেশে দাম বাড়লে বেশি দামে আমাদের পণ্য কিনতে হয়, জাহাজ ভাড়া বেশি-সেটা পরিশোধ করতে হচ্ছে। তেল-গ্যাস বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় আমরা ভাল আছি। যেমন যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। আর পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ভারতে সাধারণ খাদ্য মুল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১০ শতাংশ। সেই তুলনায় আমরা ভাল আছি। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুশাসন তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, আসন্ন ২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরাবস্থা আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকার প্রধান দেশবাসীকে সঞ্চয়ী মানসিকতা গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া, তিনি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক হতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতি স্বল্প সময়ে ফল পাওয়া যাবে এবং অধিক প্রয়োজন রয়েছে-এমন কল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

৭ হাজার কোটি টাকার ৬ প্রকল্পের অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৭ হাজার ১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৩৬২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৬৯ কোটি ৬২ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে ২ হাজার ৩৮৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানী ঢাকা শহরের দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার খাল পুনরুদ্ধার, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নাগরিক সেবার মান্নোয়নে ‘খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা যেমন দূর হবে, তেমনি আমরা একটা পরিচ্ছন্ন নগরী পাবো। মশার প্রকোপ কমে যাবে।’

সর্বশেষ খবর