বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটের নিখোঁজ আট যুবক জঙ্গিবাদে!

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

গত এক বছরে একে একে নিখোঁজ হয়েছেন সিলেট বিভাগের আট যুবক। কেউ নিরুদ্দেশ হয়েছেন পরিবারকে কিছু না জানিয়েই। আবার কেউ ঘর ছেড়েছিলেন তাবলিগে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু গৃহত্যাগী এই যুবকরা  আর ঘরে ফেরেননি। শুরুতে হন্যে হয়ে পরিবারের সদস্যরা খুঁজেছেন তাদের। সন্ধান না পেয়ে এখন নীরবে পথ চেয়ে আছেন তারা। সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ঘরছাড়া কয়েক যুবক আটকের পর উঠে এসেছে সিলেটের নিখোঁজদের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত সোমবার র‌্যাব সদর দফতরে আটকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিপথগামী আরও ৩৮ যুবকের নাম প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেট বিভাগের আটজন। যার মধ্যে সিলেটের সাতজন ও সুনামগঞ্জের একজন। র‌্যাবের দাবি- তারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছেড়েছিলেন। বর্তমানে তারা বান্দরবনের দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাদের আটকে অভিযান চলমান আছে। সন্তানদের বিপথগামিতার এমন খবরে নতুন করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এ ছাড়া ইতোমধ্যে আরও যেসব কিশোর ও যুবক নিখোঁজ হয়েছেন তাদের অভিভাবকরাও শঙ্কিত। সিলেট জেলার নিখোঁজ সাত যুবকের মধ্যে রয়েছেন- ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীরের শেখ আহমদ মামুন, একই এলাকার হাসান সায়িদ, সাইফুল ইসলাম, সাদিকুর রহমান ও সিলেট নগরীর সবুজবাগের তাহিয়াত চৌধুরী। এর মধ্যে মামুন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, সায়িদ ও সাইফুল মাদরাসাছাত্র, সাদিকুর একটি শরীরচর্চা কেন্দ্রের প্রশিক্ষক ও তাহিয়াত সিলেটের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী। বাকি তিনজনের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। জানা গেছে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর তাবলিগে যাওয়ার কথা বলে ওসমানীনগরের দয়ামীরের চার যুবক ঘর থেকে বের হন। এরপর আর ফেরেননি। একপর্যায়ে অভিভাবকরা তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে সিলেটের তাবলিগের মারকাজগুলোতে (তাবলিগের সেন্টার) খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের কেউই তাবালিগে যাননি। এ ঘটনায় গত বছরের ২৭ নভেম্বর ওসমানীনগর থানায় জিডি করা হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করেও তাদের কোনো সন্ধান পাননি। একই দিন শাহজালাল উপশহরে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তাহিয়াত। এ ঘটনায় তার বাবা কালাম আহমদ চৌধুরী ১৮ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।  গত সোমবার সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব জানায়, নিখোঁজ হওয়া তরুণ-যুবকদের জঙ্গিগোষ্ঠী সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠায়। তাদের শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদের রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। র‌্যাব আরও জানায়, প্রাথমিকভাবে নিখোঁজ ৩৮ জনের তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। যাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গেছে। বর্তমানে তাদের অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে। সেখানে তারা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ বিষয়ে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, সংবাদ সম্মেলনে যে ৩৮ জন নিখোঁজ তরুণ ও যুবকের নাম প্রকাশ করা হয়েছে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন- এমন তথ্য রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। র‌্যাব সবসময় জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর