শিরোনাম
সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নজরদারিতে প্রশাসন পুলিশ কর্মকর্তারা

উবায়দুল্লাহ বাদল

নজরদারিতে প্রশাসন পুলিশ কর্মকর্তারা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক বছর বাকি থাকতেই পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে নিরপেক্ষ সাজার এক ধরনের প্রবণতা শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচন কেমন হবে, কী হতে পারে তা নিয়ে কর্মকর্তাদের ব্যাচ ও গ্রুপভিত্তিক আলোচনা ও বৈঠক হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রশাসনের বিশ্ববিদ্যালয় ও অঞ্চলভিত্তিক গ্রুপগুলোও। এমন তথ্য থাকায় পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর কঠোর নজরদারি চলছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার। গত সপ্তাহে তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মকবুল হোসেনের পর পুলিশের এসপি (পুলিশ সুপার) পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পর পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে সম্মত হননি সংশ্লিষ্টদের কেউই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগের (২০১৪-১৮) মেয়াদ ও বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সরকার গঠনের পর মন্ত্রীদের পিএস, ডিসি, এসপি হতে কর্মকর্তারা নানা ধরনের তদবির করে থাকেন। আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কেউ কোন কালে রাজনীতি করে থাকলে তার রেফারেন্স দিয়ে পদোন্নতি-পদায়ন নিতে ভুল করেন না। অথচ তারাই পুরো মেয়াদে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ সাজার চেষ্টা করেন। নিরাপদে সটকে পড়তে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় পর্যন্ত নেন কেউ কেউ। এমনকি নথিতে যে সব সিদ্ধান্ত নিজেই দিতে পারেন তা না দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়ে দেন দায় এড়াতে। এসব বিষয় সরকারের শীর্ষমহলও অবহিত। এ জন্য এবার আগে থেকেই কঠোর নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে পুলিশ এবং সিভিল প্রশাসনে বিএনপিপন্থি অনেক কর্মকর্তা জায়গা করে নিয়েছেন। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনে ঢাকায় ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের পদায়ন ঘটেছে বলে অভিযোগ অনেকের। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিএনপির আন্দোলনে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধেও। একইভাবে সিভিল প্রশাসনের ভিতরেও বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার অভিযোগ নতুন নয়। হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, তথ্য তারা বিএনপির কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগও শোনা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী কর্মকান্ডেও তারা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু ফাইলে তারা এমনভাবে কাজ করতেন যে ফাইলটি সরকারের অগ্রগতি এবং উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতো। এ রকম বাস্তবতায় সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারটি অনুসন্ধান করে এবং সরকারের নজরে আনে। এর পরপরই সরকার বিভিন্ন ব্যক্তির সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে, যা এখনো চলমান।

সূত্র জানিয়েছে, সিভিল প্রশাসনের বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং এই অভিযোগ যদি শেষ পর্যন্ত সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশেও শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র আভাস দিয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কমবেশি ১৫০ থেকে ২০০ কর্মকর্তাকে নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই প্রেক্ষাপটে সামনের দিনগুলোতে পুলিশে আরও বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হতে পারে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের সততা, আদর্শিক নীতিনিষ্ঠ এবং দক্ষতাকে বিবেচনা করা হবে। এক্ষেত্রে আদর্শকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। অন্যদিকে পুলিশে যে সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে না দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বাধ্যতামূলক অবসর বা চাকরিচ্যুতির মতো পরিণতি বরণ করতে হতে পারে বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল হতে যাচ্ছে। কমবেশি আট থেকে দশজন সচিব অবসরে যাবেন কিছুদিনের মধ্যেই। জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা তথ্যসচিব ও তিনজন এসপিকে অবসরে পাঠানোর পর প্রশাসনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আইন ও বিধিবিধান মেনেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক মন্ত্রী। সরকারের আস্থাভাজন না হলে কোনো কর্মকর্তা সচিব বা এসপির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন না। অন্যদিকে যেখানে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও কর্মকর্তাদের লঘুদন্ড হয়, এমনকি পরবর্তী সময়ে সেসব লঘুদন্ডও বাতিল হতে দেখা যায়, সেখানে সচিবের মতো একটি মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক নির্বাহী কিংবা এসপির মতো পদ থেকে একেবারে বিদায় করে দেওয়ার বিষয়গুলো সবাইকে অবাক করেছে। তবে চাকরির মেয়াদ থাকতে কর্মকর্তাদের অবসরে পাঠানোর নেপথ্য কারণ হিসেবে আলোচনায় আসছে নানা বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। সরকারের ওপর যাদের আস্থা নেই কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে যারা ঝুঁকছেন তাদের প্রতি এটা সরকারের কঠোর বার্তা। বাধ্যতামূলক অবসরের ঘটনার পর প্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলে প্রশাসনের যারা বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন, এমনকি সচিব হয়েছেন তারাও কেউ কেউ যেন পুরোপুরি সুখী নন। আরও বড় বা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হতে না পারার কারণে তাদের মনে ক্ষোভ-অসন্তোষ। এসব কর্মকর্তা মনে করছেন, হয়তো তিনি সরকারের কাছের লোক নন তাই তাকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া যারা নিজেদের সরকারের বা আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে দাবি করেন, এদের মধ্যেও দলাদলি চরমে। সব মিলিয়ে কেউ কারও ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।

সর্বশেষ খবর