মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

সিত্রাংয়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড উপকূল

♦ নিহত ৯, বন্ধ বিমানবন্দর সমুদ্রবন্দর উপকূলের যান চলাচল ♦ নেই বিদ্যুৎ, ৯ ফুট জলোচ্ছ্বাস, বেশি ক্ষতি ১৩ জেলায়, তিন বিভাগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, নিরাপদ আশ্রয়ে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিত্রাংয়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড উপকূল

বাগেরহাটে ঘরবাড়িতে উঠেছে পানি। ভোলায় গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় জলোচ্ছ্বাস। বিভিন্ন স্থানে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয় মানুষজনকে - বাংলাদেশ প্রতিদিন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড উপকূল। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এটি উপকূলে পৌঁছায়। এরপর পটুয়াখালীর খেপুপাড়া-কলাপাড়া ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি অংশ দিয়ে সিত্রাং বাংলাদেশে আঘাত হানে। গতকাল মধ্যরাতে ঝড়ের কেন্দ্রস্থল উপকূল ত্যাগ করেছে। প্রাথমিকভাবে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে ৫০-৬০ কিলোমিটার গতিবেগের কথা জানিয়েছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা। নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল ও কক্সবাজারে ৯ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের খবর পাওয়া গেছে। অন্তত ৯ জন মারা     গেছেন। তিন বিভাগের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক স্থান থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম গতকাল রাত ৮টায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ এরই মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করেছে। আর মধ্যরাত থেকে ভোরে এর পুরো অংশ বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। তবে যেহেতু এটি মাঝারি ঘূর্ণিঝড় এর প্রভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের কারণে এসব এলাকায় কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করছি। আবহাওয়া অফিসের এক বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ ছিল। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ছিল ৭ (সাত) নম্বর বিপদসংকেত। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর,  নোয়াখালী ও ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় ছিল। এতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় ছিল। বুলেটিনে আরও জানানো হয়, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর নৌ-বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূলীয় ১৩ জেলায় মারাত্মক এবং দুই জেলায় হালকাভাবে আঘাত হানবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বরগুনার পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া। মারাত্মক আঘাত হানতে পারে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী এবং ফেনী জেলায়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপ অঞ্চলগুলো বিশেষ করে মহেশখালী, সন্দ্বীপ এগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব অঞ্চলে লোক সরানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডা. এনাম বলেন, উপকূলে ৭ হাজার ৩০টি শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। সকাল থেকেই মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। আমরা আম্ফানে ২৪ লাখ সরিয়েছিলাম। এবার ২৫ লাখ সরানোর লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এটা সিভিয়ার সাইক্লোন। ঘণ্টায় এর বাতাসের গতিবেগ ৮০-১০০ কিলোমিটার। এটি সিডরের মতো মারাত্মক নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন মানুষও যেন মারা না যায়, সেটা হবে বড় সফলতা। পাশাপাশি গবাদি পশুগুলোকেও আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে বলা হয়েছে। দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শতভাগ মানুষকে সরিয়ে আনতে পারব। এরই মধ্যে আর্মড ফোর্স ডিভিশনের প্রতিনিধিদের বলা হয়েছে, তারা যেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে সম্পৃক্ত করে। দুর্গম এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তারা যেন সহযোগিতা করে। তারা এতে সম্মতি দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়াররা সিপিপি (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে কাজ করছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যারা আছে, তারা তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এরই মধ্যে আমাদের মানবিক সহায়তা যা আছে পৌঁছে দিয়েছি। শেল্টারের লোকজনকে আমরা দুপুরে, রাতে এবং আগামীকাল সকালে তিনবেলা খাবার দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা প্রতি জেলায় ৫ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছি। ড্রাই কেক, ড্রাই বিস্কুট, চাল, তেল, লবণ, চিনি, গুঁড়া মসলা পাঠিয়েছি। যাতে রান্না করে খাবার খাওয়াতে পারে। বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ সর্বাত্মক রক্ষা করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে।

বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু আটজনের : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে গতকাল মধ্যরাতে পাওয়া শেষ খবর অনুযায়ী কুমিল্লায় তিনজন, বরগুনায় একজন, পটুয়াখালীতে একজন, ভোলায় দুজন, নড়াইলে একজন, খুলনায় একজনসহ নয়জন মারা গেছেন।

ভোলা থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, চরফ্যাশনে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে গাছ ও দেয়ালচাপায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরাদ হোসেন জানান, চরফ্যাশন উপজেলার জাজিরগঞ্জ ও দৌলতখান  পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে পৃথক এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন মনির (৩৫) ও বিবি খাদিজা (৮০)।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাড়ির পাশের রাস্তার ধারে দেয়াল ধসে পড়লে মনির নামের ওই ব্যক্তি মারা যান। আর ঘরের ওপর একটি গাছ ভেঙে পড়লে গুরুতর আহত হন বৃদ্ধা খাদিজা। পরে তাকে দৌলতখান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া অন্যান্য স্থানের মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

আজ তিন বিভাগের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে আজ খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে, সেগুলোর পাঠদান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি সবাই : খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী- এ ১৫ জেলায় ৬ হাজার ৯২৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে মোট ৩৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ জন আশ্রয় নিতে পারার সক্ষমতা ছিল। গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত ২ লাখ ১৯ হাজার ৬৯০ জন আশ্রয় নেন। এ সময় পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া গবাদি পশুর সংখ্যা ৪৫ হাজার ৪৪২টি। জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্রের (এনডিআরসিসি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে গেছেন, কিন্তু সম্পদ লুটের আশঙ্কায় অনেকে আসেননি আশ্রয় কেন্দ্রে।

খুলনায় বেড়িবাঁধে ভাঙন : খুলনায় জোয়ারের পানির চাপে কয়রা হরিণখোলা ও গাতিরঘেরি বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ উপজেলায় ২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে। এ ছাড়া দাকোপ ও পাইকগাছায় আরও ২০-২৫ কিলোমিটার বাঁধ নাজুক অবস্থায় রয়েছে।

বরিশালে বিপৎসীমার ওপরে নদীর পানি : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশালের বিভিন্ন নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। অন্যান্য নদীর পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সংলগ্ন চর ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বরিশাল নগরীর প্রধান সড়কও তলিয়ে গেছে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের গতকাল বিকাল সোয়া ৫টার রিপোর্ট অনুযায়ী, কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার (২.৫৫) ৫ সেন্টিমিটার, তেঁতুলিয়া নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার, মেঘনা ও সুরমা নদীর পানি (৩.৪১ মিটার) ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, বুড়ীশ্বর ও পায়রা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার, বিষখালী নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া ঝালকাঠির বিষখালী, পিরোজপুরের বলেশ্বর এবং উমেদপুর পয়েন্টে কচা নদীর পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। নদ-নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল এবং চরসমূহ। বরিশাল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক সহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে।

সামুদ্রিক জোয়ারের পানির - ফুট উচ্চতা : ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়ছে। রবিবার রাত থেকে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিদ সাইফ আহমেদ বলেন, উপকূলীয় এলাকায় সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ৫-৬ ফুট উচ্চতা বেড়েছে। শহরের সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে ভাঙন তীব্র হয়েছে। তবে অন্য কোথাও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। পাউবোর লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পর্যবেক্ষণে রেখেছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম বরিশাল বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা : আবহাওয়ার পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিমানবন্দর। গতকাল সন্ধ্যা থেকে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৩ বিমানবন্দর বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বেবিচক জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে দেশের বিমানবন্দরের এপ্রোন এলাকার হালকা যন্ত্রপাতি সরিয়ে রাখা হচ্ছে। এয়ারলাইনগুলোকেও তাদের যন্ত্রপাতি নিরাপদ স্থানে রাখতে বলা হয়েছে। যাতে ঝড়ে কোনো যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এদিকে দেশি এয়ারলাইনগুলো ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি নিয়েছে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে নভোএয়ার। গতকাল বিকাল থেকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ফ্লাইট বাতিল করেছে। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ফ্লাইট চলাচল করছে।

বন্দরেঅ্যালার্ট-থ্রি জারি : সিত্রাংয়ের আঘাতের আশঙ্কায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যালার্ট-থ্রি বা বিপদসংকেত জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বন্দরের সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম। জেটিতে অবস্থান করা সব জাহাজকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে গভীর সাগরে। জেটিসংলগ্ন বন্দরের ইয়ার্ড থেকে সীমিত পরিসরে কিছু পণ্য খালাস হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত শুরুর আগেই সব পরিবহনকে জেটি ও ইয়ার্ড ছাড়তে বলা হয়েছে। জেটিতে পণ্য খালাসে নিয়োজিত সরঞ্জামগুলোর ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা অ্যালার্ট-থ্রি জারি করেছি। সাধারণত সংকেত ৬ কিংবা এর ওপরে গেলে আমরা বন্দরে বিপদসংকেত জারি করি। জেটিতে ১৮টা জাহাজ ছিল। সব কটিকে সাগরে পাঠিয়ে জেটি জাহাজশূন্য করা হয়েছে। জেটিতে লোডিং-আনলোডিং বন্ধ আছে।’

সেন্টমার্টিনে ডুবল নোঙর করা ১৩ ট্রলার : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। এরই মধ্যে ঘাটে নোঙর করা ১৩টি ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গতকাল ভোর থেকেই ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে সেখানে। প্রচণ্ড বেগে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো ও দমকা হাওয়া। ফলে গাছপালা ভেঙে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটেছে। সকাল থেকেই দ্বীপের চারপাশে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেড়েছে। এলাকার কিছু কিছু জায়গায় পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ঘাটে নোঙর করা ১৩টি ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে। এর মধ্যে একটি মানুষ পারাপারের বোটও রয়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে শিগগির খাদ্য সংকট দেখা দেবে দ্বীপে।

ভেসে এলো বিদেশি জাহাজ : দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, একটি বার্জ জাহাজ ভেসে এসেছে সেন্টমার্টিনে। এতে অনেক কনটেইনার এবং অন্যান্য মালামাল রয়েছে। তবে সেটি কোথা থেকে এসেছে সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারেননি। সেন্টমার্টিনের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, ভেসে আসা জাহাজটির বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে কন্ট্রোল রুম খোলার নির্দেশ : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় বিদ্যুৎ বিতরণ এবং সঞ্চালন কোম্পানিকে কন্ট্রোল রুম খোলার নির্দেশ দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। একই সঙ্গে অপর এক অফিস আদেশে সব বৈদ্যুতিক স্থাপনা সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। অপর এক অফিস আদেশে বলা হয়, ‘সিত্রাং’-এর কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা/তদারকির জন্য নির্মিত বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন সব বিতরণ সংস্থা/কোম্পানি ও সঞ্চালন কোম্পানিকে পৃথক পৃথক কন্ট্রোল রুম স্থাপনপূর্বক এ বিভাগকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

স্কুল-কলেজ আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং কবলিত এলাকার দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্কুল-কলেজকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনা গতকাল সব অধ্যক্ষ, শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষককে অবহিত করা হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, দুর্গত জনপদের নিরাপদ আশ্রয় প্রদানের জন্য নিকটস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে (স্কুল-কলেজ) অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠাগারের বই, গুরুত্বপূর্ণ দলিল, বিজ্ঞানাগার এবং কম্পিউটার ল্যাবরেটরির সরঞ্জাম ও অন্য উপকরণ সংরক্ষণেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয় এ নির্দেশনায়।

মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক চালু রাখার চেষ্টা : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বিকল্প ব্যবস্থায় মোবাইল ফোন অপারেটররা নেটওয়ার্ক চালু রাখার চেষ্টা করছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটব। বিবৃতিতে অ্যামটব জানায়, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। এ অবস্থায় মোবাইল অপারেটররা বিকল্প ব্যবস্থায় ব্যাটারি ও জেনারেটর ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। টেলিকম সেবাকে জরুরি সেবা হিসেবে বিবেচনায় রেখে জনস্বার্থে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছে অ্যামটব।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর