শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণ ভর্তুকি নিয়েও প্রশ্ন আইএমএফের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কেন কমানো যাচ্ছে না। ঋণখেলাপিদের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে কোন বিবেচনায়। এতে ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এ ছাড়া বাজেটের কোন কোন খাতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, কোনো খাতের অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে কি না, ভর্তুকির অর্থ সঠিক জায়গায় ব্যয় করা হচ্ছে কি না- এসব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি বুধবার থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক চালাচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে তারা। এতে খেলাপি ঋণ, ভর্তুকি ও রিজার্ভের হিসাব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

অবশ্য দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, আইএমএফের ঋণ পাওয়ার বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে বুধবার আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ ও ৩১ অক্টোবর এবং ২ ও ৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আরও চারটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে প্রতিনিধি দলের। এসব বৈঠকে রিসেন্ট মনিটরি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড আউটলুক, ইন্টারেস্ট রেট ডেভেলপমেন্ট, সরকারি বন্ড, মনিটরি এক্সচেঞ্জ রেট, রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট, ব্যাংকিং ইস্যুজ, ব্যালান্স অব পেমেন্ট, এক্সটারনাল লোন ডিসবার্সমেন্ট আইএমএফ টিএ রিপোর্টস, রিসেন্ট ট্রেড পারফরম্যান্স, রিসেন্ট এক্সচেঞ্জ পারফরম্যান্স, রিস্ক বেইসড সুপারভিশন, টেকনিক্যাল মিটিং অন এএমএল ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ আলোচনা হবে।

এ ছাড়া ফাইন্যানশিয়াল ডেটা, অন্যান্য বৃহৎ চ্যালেঞ্জ, বপ রেটেড ম্যাটারস, মনিটরি পলিসি স্ট্র্যাটেজি, এক্সচেঞ্জ রেট প্রেশার, ইনস্টিটিউশনাল অটোনমি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স, কমার্শিয়াল ব্যাংক পারফরমস এবং এফএসএপি আপডেটের বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র। এদিকে সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কর্মকর্তা পর্যায়ে চুক্তির অগ্রগতির জন্য আলোচনা করা। আলোচনা হবে আইএমএফের বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) কর্মসূচি এবং নতুন উদ্যোগ, সহনশীলতা ও টেকসই সহায়তা তহবিল (আরএসটিএফ) কর্মসূচি থেকে এ ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে। আরএসটিএফ ঋণের অধীনে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোকে অর্থায়ন করা হয়। আইএমএফের কাছে ঋণের জন্য চাওয়া চিঠিতে এই আরএসটিএফের কথাও উল্লেখ করেছিল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়ন, রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রম গতিশীল করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি, আয়কর আইন ও শুল্ক আইন প্রণয়ন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও খেলাপি ঋণ কমানো, ভর্তুকি ও প্রণোদনা কমানো, রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি ঠিক করাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আইএমএফ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে সরবরাহ করা প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারকেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসেবে দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, আন্তর্জাতিক হিসাব পদ্ধতির সঙ্গে যা সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করে আইএমএফ। আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করতে গত বছর থেকে বলে আসছে সংস্থাটি। গতকালের বৈঠকেও এ বিষয়ে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেন নিজেদের মতো করে হিসাব করছে সে বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে বৈঠকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর