রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
ঢাকায় আওয়ামী লীগ রংপুরে বিএনপির শোডাউন

বিএনপি এলে দেশসুদ্ধ গিলে খাবে : কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি এলে দেশসুদ্ধ গিলে খাবে : কাদের

ঢাকায় সম্মেলন :- রাজধানীতে গতকাল ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে লাখো মানুষের স্রোত নামিয়ে গতকাল রাজধানীতে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে দলীয় নেতা-কর্মীর তীব্র ঢলে সম্মেলনটি শেষ পর্যন্ত বিশাল জনসভায় রূপ নেয়।

এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এ দেশের অর্থনীতি গিলে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ গিলে ফেলেছে। এবার যদি তারা ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে দেশসুদ্ধ গিলে খাবে।

রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের ব্যাপক উপস্থিতির বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দিতেই জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে মানুষের ঢল নামিয়ে বড় ধরনের শোডাউন করল ক্ষমতাসীন দলটি। আর এর মাধ্যমেই শুরু হলো আওয়ামী লীগের রাজপথে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া। রাজধানীর বাণিজ্য মেলার বিশাল মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে আশপাশের সড়কগুলোয়ও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। অনেক নেতার কণ্ঠে উঠে এসেছে- এটি সম্মেলন নয় যেন জনসমুদ্র।

সম্মেলন ঘিরে বিশাল এ জনস্রোতের সামনে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, বিএনপি যতই ষড়যন্ত্র করুক, দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামনে এগিয়ে যাবে। বিএনপির হাত দিয়ে দেশ পেছনে ফিরে যাবে না। তারা বলেন, সংবিধান মোতাবেক যথাসময়েই নির্বাচন হবে। বিএনপি অংশ না নিলেও যথাসময়েই নির্বাচন হবে। কোনো ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। নির্বাচন ঠিক করবে কারা দেশ পরিচালনা করবে।

প্রায় আট বছর পর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন ঘিরে জেলার পাঁচ উপজেলা ও সাত ইউনিটের নেতা-কর্মীরা অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড-থানার বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সম্মেলনে যোগ দেন। দুপুর ২টায় সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও ১২টার আগে থেকেই খন্ড খন্ড বর্ণাঢ্য মিছিল নিয়ে বাণিজ্য মেলার মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারসহ ঢাকঢোলের বাদ্যবাজনার তালে তালে অসংখ্য মিছিল আসতে থাকে সম্মেলনস্থলে। বেলা সোয়া ২টায় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর আগেই নেতা-কর্মীর ঢলে বাণিজ্য মেলার মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আশপাশের সড়কগুলোয়ও ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা ভাগ করে রংধনু (সাত রঙের) কালারের পোশাকে নেতা-কর্মীদের আসতে বলা হয়। সম্মেলনস্থলে উপজেলাভিত্তিক অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। নেতাদের নাম ও সংসদীয় আসন অনুযায়ী নানা রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে অবস্থান নেন নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘদিন পরে হলেও বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করল আওয়ামী লীগ।

দলীয় ও জাতীয় পতাকা এবং বেলুন উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় পরিবেশন করা হয় জাতীয় ও দলীয় সংগীত। গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। সম্মেলনের জন্য দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে বড় আকৃতির মঞ্চ তৈরি করা হয়। মূলমঞ্চের সামনে আরেকটি ছোট মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করা হয়।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বেনজির আহমেদ এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমানের পরিচালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণালকান্তি দাস, আইন সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন, জাতীয় কমিটির সদস্য বাতেন মিয়া, ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ।

সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে, কেউ হারাতে পারবে না। জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে না দাবি করে তিনি বলেন, যত নাচানাচি লাফালাফি করুক, তাদের সঙ্গে জনগণ নেই। তারা কর্মীদের বোঝাচ্ছে, ক্ষমতায় আসি আসি। এত আহ্লাদ! এত সুখ! বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল টাকার বস্তার ওপর শুয়ে আছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফখরুল এখন চাঙা হয়ে গেছেন। টাকা পাচ্ছেন তো। টাকা পাইলেই তার দল খুশি। টাকা ওড়ে আকাশে, বাতাসে; টাকা ওড়ে পাড়ায়-মহল্লায়। আমরা খবর নিচ্ছি। কারা টাকা পাঠায়। খোঁজ পেয়েছি, ব্যবস্থা হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে, আন্দোলনের খেলা হবে, নির্বাচনে খেলা হবে। ভোট চুরির বিরুদ্ধে, ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। যারা ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে, প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। তিনি বলেন, বিএনপি থেকে সাবধান! বড়লোকদের বাড়ির সামনে লেখা থাকে কুকুর থেকে সাবধান! আমরা বলি, বিএনপি থেকে সাবধান! বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তত্ত্বাবধায়কের ভূত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলুন। সেটা আর হবে না। আদালত মিউজিয়ামে পাঠিয়েছে। আমাদের দোষ নেই। আমরা তো নিষিদ্ধ করিনি। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে। গাধা পানি ঘোলা করে খায়। সময় এলে দেখা যাবে। রংপুরে বিএনপির সমাবেশ সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিন দিন আগে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে রংপুরে এনে সব শোয়াইয়া রাখছে। মঞ্চের সামনে শুয়ে আছে। মঞ্চের ওপরে শুয়ে আছে। বাড়ির ছাদের ওপর, গুদামঘরে শুয়ে আছে।

মির্জা ফখরুলকে টেলিভিশনে আওয়ামী লীগের সম্মেলন দেখার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রংপুরের ছবিও দেখুন, আমাদেরটাও দেখুন। এখানে তো শেখ হাসিনা নাই। দেখাব, পলোগ্রাউন্ডে। সেখানে ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে।

শেখ হাসিনা যাবেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আজকে যারা সরকারের পতন ঘটানোর জন্য হুংকার দিচ্ছেন, তারা ভুলে যান কেন ২০১৪ সালে তান্ডব করেছেন, ২০১৫ সালে আগুনসন্ত্রাস করেছেন। বলেছিলেন সরকার পতন না হলে ঘরে ফিরবেন না। কিন্তু পরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া লেজ গুটিয়ে গুলশানের বাসায় চলে গেছেন। তাদের সব ধরনের কর্মকান্ড মোকাবিলা করার সক্ষমতা আমাদের আছে।

প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মির্জা ফখরুল আমাদের জনগণ দেখান। আওয়ামী লীগকে জনগণের ভয় দেখাবেন না। জনগণের দল আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার হয়েছে। জীবিত না থাকায় জিয়াউর রহমানের বিচার হয়নি। প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কখনো বাংলাদেশে আসবে না। বিএনপি ২০১৪ সালের মতো ভুল করবে না, ২০১৮ সালের মতো তামাশা করবে না। নির্বাচনই ঠিক করবে কারা ক্ষমতায় আসবে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, বিএনপি বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে আসবে না। আমরা বলে দিতে চাই- সংবিধান মোতাবেক যথাসময়েই নির্বাচন হবে। বিএনপি নির্বাচনে এলে আসবে, না এলে না আসবে। আমরা যথাসময়েই নির্বাচন করতে চাই।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এই বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে তা অব্যাহত থাকবে। যত অপচেষ্টা চলুক, কাউকে শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন তারা বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করতে চায়। পাকিস্তান বানাতে চায়। তাদের কোনো ছাড় নেই, মোকাবিলা করব। ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিএনপি সভা-সমাবেশ করছে। তারা বলছে, ১০ ডিসেম্বরের পর নাকি খালেদা জিয়া দেশ চালাবেন। আগামী দুই মাস ঢাকা শহরে বিশাল বিশাল জনসভা করে জানান দেব সাংগঠনিক শক্তি। বুঝিয়ে দেব কারা দেশ চালাবে। আর কারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ক্ষমতা দখল করে নেবে বলে শুনেছি। তারা নাকি মন্ত্রিপরিষদও গঠন করেছে। বিএনপি এটি কীভাবে করতে পারে, তা আমার জানা নেই। এ সমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি বলে দিচ্ছে আমরা আবারও সরকার গঠন করব।

সর্বশেষ খবর