বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

অপচেষ্টা চলছে রাজনৈতিক অবস্থা ঘোলাটে করার

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপচেষ্টা চলছে রাজনৈতিক অবস্থা ঘোলাটে করার

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে বিশ্বব্যাপী একটা সংকট, এ সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা, এই প্রবণতা পরিহার করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শুধু মুখে বললে হবে না, নিজের থেকেই পাশে দাঁড়াতে হবে।

গতকাল সংসদের ২০তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,  ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং তার পরপরই স্যাংশন দেওয়া, এই স্যাংশন দেওয়ার পরই কিন্তু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে।

সারা বিশ্বের অবস্থাই কিন্তু টালমাটাল। এটা শুধু বাংলাদেশ না। বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, স্যাংশন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। কাজেই এই স্যাংশন প্রত্যাহার করা এবং যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি তো আমি জাতিসংঘেও বসে করে এসেছি। আমি সব সময় বলি, এখানে আমাকে অনেকে বলেছে এ কথা বললে কোনো কোনো দেশ নারাজ হবে। কে নারাজ হলো জানি না। আজ সারা বিশ্বের মানুষ ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, স্যাংশনে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে আমরা সার, তেল কিনতাম সেখানে যুদ্ধের কারণে আমরা কিনতে পারছি না। আমরা কিন্তু বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। বিকল্প দেশ খুঁজে বের করছি, সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্যপণ্য আনতে পারি। সারের ব্যবস্থা, ডিজেলের, এলএনজির ব্যবস্থা সেক্ষেত্রেও কিন্তু বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই। এ অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের একটু লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে না। অনেক সময় তারা এগুলো লুকিয়ে রাখে এবং জিনিসের দাম কৃত্রিম উপায়ে বাড়ায়। এখানে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের যে মনিটরিং ব্যবস্থা তাদের খুঁজে বের করা হয়, ধরা হয়। যারা কৃত্রিম উপায়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি এবং চলমান থাকবে। 

সংসদ নেতা বলেন, আমি দুর্ভিক্ষের কথা বলেছি, মানুষকে ভয় পাওয়ানোর জন্য না, সতর্ক করার জন্য। শুধু সতর্ক করার জন্য না, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর, আমরা আমাদের ফসল ফলাব, খাদ্য উৎপাদন করব। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতিটি জায়গায় জ¦ালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম গ্রেট ব্রিটেনে ৮০ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজারের সবকিছু রেশনিং করে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।

কিছু পত্রিকা এমনভাবে হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিমূলক : বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বে যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে, হ্যাঁ বাংলাদেশে তো বেড়েছে, সেটা তো অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্পমূল্যে, যারা ক্রয়ক্ষমতা রাখে না তাদের কিন্তু আমরা দিচ্ছি। তারা যাতে সচ্ছলভাবে চলতে পারে। কিন্তু হেডলাইন দিয়েছে সব দেশের থেকে বাংলাদেশের পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভিতরে যে ডাটাটা দিয়েছে সেখানে কিন্তু বাংলাদেশ  নেই, হিসাবেও আসেনি। বাংলাদেশ কিন্তু কয়েকটা দেশ থেকে বেশ ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। কিছু ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিমূলক। ভিতরে গিয়ে আপনি দেখবেন সেটা কখনো সঠিক না, সঠিক তথ্য তারা দেয় না, মানুষকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়। আর যে প্রতিষ্ঠানটির (সিপিডি) কথা উনি উল্লেখ করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের তো কোনো কিছুই ভালো লাগে না। তাদের ভালো লাগে কখন যখন সেনা শাসন ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তাদের একটু কদর বাড়ত। কদরটা বাড়বে এই আশায় তারা বসে থাকে। আমার কথা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ, কষ্ট যাতে না হয়, তার জন্য যা যা করণীয় সাধ্যমতো আমরা করে যাব। তিনি আরও বলেন, আমি ইংল্যান্ডের কথা বলতে পারি, সেখানে আমাদের অনেক লোক আছে। বহু মানুষ, অধিকাংশ মানুষ আজকে কয়েক মাস মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই, তারা কিনে খেতে পারে না। তারা তিন বেলার খাবার কিনতে পারে না, এক বেলার খাবার তাদের বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এভাবে ইউরোপ, আমেরিকায়, সেখানে যে হারে দরিদ্র বেড়েছে এবং কোনো কোনো জায়গায় দেখবেন সেখানে কোনো মানুষ খাবার পাচ্ছে না। থাকার ঘর নেই, রোগের চিকিৎসা নেই, গৃহহীন মানুষের ভিড়। ইউরোপের অবস্থা এমন, শীত এসে যাচ্ছে সেখানে তারা ঘর গরম করতে পারছে না, ঘর গরমের বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। জার্মানিতে কিন্তু গরম পানি ব্যবহার করতে দিচ্ছে না, কারণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে। এই যখন বিশ্বব্যাপী অবস্থা, বাংলাদেশে এসব দোষ টোকাতে না গিয়ে দেশের জনগণের জন্য কী করা, সংসদ সদস্য হিসেবে সেটাও দেখা উচিত। আর যে পত্রিকা, যে প্রতিষ্ঠান, এ প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আমার ভালো চেনা আছে। তাদের তো মানে আমাদের মতিয়া আপার ভাষায় বলতে হয়, একটা প্রতিষ্ঠান আছে যার প্রধান মতিয়া আপা নাম দিয়েছেন, তার আসল নাম বাদ দিয়ে বলেছেন, সেনা প্রিয় নাম। অর্থাৎ একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তাদের একটু দাম বাড়ে, কদর পায়। এটা বাস্তবতা। আমরা জনগণের পাশে আছি, থাকব। তারা যেটা বলছে বলতে দিন। আমি যা আমার কাজ, করার করে যাব। আমি জনগণের পাশে আছি, জনগণের সহায়তা দেওয়া সেটা আমি দিয়ে যাচ্ছি।

সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে কাজ চলছে : সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিছু লোক দেশের বাইরে অবস্থান করে বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারে লিপ্ত হন। সরকারবিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা, উসকানিমূলক ও বানোয়াট বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

সংসদীয় সভায় শেখ হাসিনার হুঁশিয়ারি : যেসব এমপি-মন্ত্রী স্থানীয় সরকারের ভোটে নৌকার বিরোধিতা করছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের কপালে নৌকা জুটবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কারা কারা নৌকা ডুবিয়েছেন, আমার প্রার্থীকে পছন্দ হয়নি বলে বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছেন সব তথ্য আমার কাছে আছে। তারা উচিত শিক্ষা পাবেন। গতকাল রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সম্মেলন কক্ষে ক্ষমতাসীন দলের সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

এখন থেকে এমপি-মন্ত্রীদের এলাকামুখী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। কাজেই এখন থেকে সবাইকে জনগণের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে হবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। দ্রুত জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষ করে সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের কোনো সভা হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদ অধিবেশন চললেও তা ছিল সংক্ষিপ্ত। দীর্ঘদিন পর গত রাতে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় এমপিরা তৃণমূলে ভয়াবহ কোন্দলের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। তারা বলেন, আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু। আওয়ামী লীগকে হারাতে বিএনপি-জামায়াত প্রয়োজন হয় না, আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগকে হারায়। নৌকা নিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে নৌকার এমপির বিরোধিতা করেন। সংসদীয় দলের সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে নূর এ আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় প্রধানের সঙ্গে মূল মঞ্চে বসেন। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নুর উদ্দিন নয়ন বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর আওয়ামী লীগের এমপি হুইপ আতিকুর রহমান আতিক, সাগুফতা ইয়াসমিন এ্যামিলি, মমতাজ বেগম, অ্যারোমা দত্ত, রুবিনা আকতার মিরা, ছোট মনির, মোয়াজ্জেম হোসেন রতনসহ ১৫ জন এমপি বক্তৃতা করেন।

সর্বশেষ খবর