শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
র‌্যাবের তথ্য

অস্ত্র কিনতে কেএনএফকে টাকা দেয় শারক্বীয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের ডাকে তথাকথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া অর্ধশতাধিক তরুণের খোঁজ এখনো মেলেনি। ফলে যে কোনো নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না র‌্যাব। সংস্থাটি বলছে, কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা নাশকতা করতে পারে। তারা নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুই ধাপে ভারী অস্ত্র কেনার জন্য কেএনএফকে ১৭ লাখ টাকা পাঠানোর তথ্য পাওয়া গেছে। একে-২২ ও একে-৩২ অস্ত্র সরবরাহের তথ্যও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেল ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটি।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার লাকসাম থেকে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের অর্থ সমন্বয়ক ও হিজরতবিষয়ক সমন্বয়কসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর সদস্যরা। তারা হলেন- আবদুল কাদের ওরফে সুজন ওরফে ফয়েজ ওরফে সোহেল, ইসমাইল হোসেন ওরফে হানজালা ওরফে মানসুর, মুনতাছির আহম্মেদ ওরফে বাচ্চু ও হেলাল আহমেদ জাকারিয়া। তাদের মধ্যে বাচ্চু সংগঠনটির অর্থবিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক, সোহেল ও হানজালা হিজরত করা সদস্যদের সমন্বয়ক এবং জাকারিয়া সামরিক শাখার তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। অভিযানে তাদের কাছ থেকে দুটি উগ্রবাদী বই, একটি প্রশিক্ষণ সিলেবাস, ৯টি লিফলেট, একটি ডায়েরি এবং চারটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

নতুন জঙ্গি সংগঠনের নাশকতার আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, জঙ্গিদের নাশকতার যে বিষয় রয়েছে, র‌্যাব সব সময়ই প্রস্তুত থাকে। আমরা ধরেই নিয়েছি, যেহেতু অনেকেই নিরুদ্দেশ রয়েছে, যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের কারণে জঙ্গিবাদ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিন্তু এটা নির্মূল হয়নি। আমরা কখনই আত্মতুষ্টিতে ভুগি না। যে কোনো সময়ই যে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা নাশকতা করতে পারে। এ ধরনের প্রস্তুতির কথা চিন্তা করেই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। পার্বত্য অঞ্চলে আমাদের অভিযান চলছে। স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ রয়েছে এমন ৫৫ জনের যে তালিকা রয়েছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে, আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সংগঠনের আমির মাহমুদ কুমিল্লা সদর দক্ষিণের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। প্রায় দুই বছর আগে তিনি চাকরি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন। পরবর্তী সময়ে, এক বছর আগে কুমিল্লার প্রতাপপুরে অবস্থিত তার সেমি পাকা বাড়িসহ জমি স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে সাড়ে তিন বিঘা জমি কেনেন এবং পরিবার নিয়ে সেখানে স্থানান্তরিত হন। সংগঠনের আমির মাহমুদ নাইক্ষ্যংছড়িতে চাষাবাদ, পোল্ট্রি ফার্ম ও গবাদি পশুর খামার পরিচালনা করতেন। এ ছাড়াও তারা সংগঠনটির মহিলা শাখার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমরা বেশ কিছু মহিলা সদস্যের বিষয়ে জানতে পেরেছি যারা সংগঠনের চাঁদা প্রদানসহ দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।

সংগঠনটির অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে আল মঈন বলেন, গ্রেফতার বাচ্চুর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছেন। টাকা প্রাপ্তির পরে যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, হয়তো বেশ কিছু অস্ত্র প্রশিক্ষণ বা নাশকতার জন্য তাদের দিয়ে থাকতে পারেন। বাচ্চুর দুই ধাপে ১৭ লাখ টাকা পাঠানোর তথ্য পেয়েছি। এ কে-২২ এবং এ কে-৩২ অস্ত্র সরবরাহের তথ্যও পাওয়া গেছে। তবে তাদের কাছ থেকে এমন অস্ত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারব।

র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, হিজরতকৃত সদস্যদের তত্ত্বাবধানসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। তারা ২-৪ বছর আগে পরিচিতদের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। একাধিকবার দুর্গম পাহাড়েও প্রশিক্ষণ নেন তারা। সম্প্রতি র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর অভিযানের কারণে তারা কুমিল্লার লাকসামে আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তারা সদস্য ও সমমনাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন। এরপর সাংগঠনিক প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতেন। এ ছাড়া তারা পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত সদস্যদের পরিবারকেও আর্থিক সহযোগিতা দিতেন। গ্রেফতার বাচ্চু চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি সংগঠনটির অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিবের অন্যতম সহযোগী এবং অর্থবিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। গত ৮-৯ মাসে বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র কেনার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কাছে ১৭ লাখ টাকা, সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রায় ৩০ লাখসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকা পাঠান বাচ্চু।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর