শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সরকার চায় না জনগণ সংবিধান জানুক

--- শাহদীন মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার চায় না জনগণ সংবিধান জানুক

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, সংবিধান সরকারের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে, সরকার কী করতে পারবে অথবা কী করতে পারবে না তা সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এটি প্রণীত হয়েছে। নির্বাহী বিভাগ জনগণের কোন কোন  অধিকার পূরণে বাধ্য সংবিধানে তা স্পষ্ট করে লেখা। ফলে এ পর্যন্ত সব সরকারের লক্ষ্য ছিল সংবিধান যেন প্রচার না হয়। সরকার চায় না জনগণ সংবিধান সম্পর্কে অবগত থাকুক। গতকাল গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের অধ্যাপক এস আই মান্নান হলে বাংলাদেশের সংবিধানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘সংবিধানের ৫০ বছর ও আমাদের মৌলিক অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শাহদীন মালিক এসব কথা বলেন। শাহদীন মালিক বলেন, ‘এ পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয় সংবিধান ছাপিয়েছে ১৪ বার। সর্বশেষ ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয় মাত্র ৫০০ কপি সংবিধান ছাপিয়েছিল, এরপর আর সংবিধান ছাপানো হয়নি। জনসাধারণের মধ্যে সংবিধান প্রচারে সরকারগুলোর বিশেষ অনীহা রয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে জনগণের যেসব অধিকার সুরক্ষিত ছিল গত ৫০ বছর তা শুধু খর্বই হয়েছে।’ নির্বাচন ব্যবস্থা ও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক নিয়মনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, ‘দেশ এমনভাবে চলছে সংবিধান বাদ দিলেও কিছু যায় আসে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন ও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১২৩ এর ৩(ক) ধারা অনুসরণ করা হয়নি। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে- সংসদ না ভেঙে নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে চলমান সংসদের মেয়াদ শেষ হলেই শুধু নতুন সংসদ শপথ নিতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ইচ্ছা করলেই সব বেঞ্চ এককভাবে গঠন করতে পারেন, এটি কোনো গণতান্ত্রিক সংবিধানের নজির নয়। বাহাত্তরের সংবিধানে ৬৩তম অনুচ্ছেদে বলা ছিল- যুদ্ধ বা যুদ্ধ আসন্ন হলে জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে। ১৪১(ক)-এর মাধ্যমে রাষ্ট্রকে কিন্তু অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে, সরকারগুলো এর অপব্যবহার করছে।’

আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে মৌলিক অধিকার পরিপন্থী আইন করা যাবে না-এমন বিধান থাকলেও এক বছরের মধ্যেই দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে তা খর্ব করা হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিটি সরকার বিভিন্ন কালো আইনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ করেছে। যত সরকার ক্ষমতায় এসেছে সবাই নিজেদের মতাদর্শের আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ অব্যাহত রেখেছে।’

সভায় আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যে প্রত্যাশা থেকে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল তার সঙ্গে আপস করা হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য- ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধান সংশোধন করে জনগণকে বিভক্ত করা হয়েছে। ফলে সংবিধানে রক্ষিত জনগণের মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো চলে গেছে দৃষ্টির বাইরে। মৌলিক অধিকারের প্রতি জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে, নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর