বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কঠিন পরীক্ষা বাইডেনের

প্রতিদিন ডেস্ক

কঠিন পরীক্ষা বাইডেনের

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামনে কঠিন পথ অপেক্ষা করছে, মনে করেন অনেক বিশ্লেষক ছবি : বিবিসি

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাতে এই ভোট গ্রহণ হয়। এই নির্বাচনে হারজিত জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা না থাকার ফয়সালা নয়। তবে নানা কারণে এই নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিশ্ব। এই ভোটের ফলাফলের মাধ্যমে বোঝা যাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখনো ভোটারদের মধ্যে কতটা জনপ্রিয়। তিনি ভবিষ্যতে সহজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন, নাকি প্রতিপদে রিপাবলিকানরা তাকে আটকে দেবে, তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে এই ভোটের মাধ্যমে।

বিবিসি খবরে বলা হয়, মধ্যবর্তী নির্বাচনটি হোয়াইট হাউসের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট এবং তার দলের ভাগ্য নির্ধারণের পাশাপাশি গোটা জাতির দিকনির্দেশনার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্টের মেয়াদের মাঝামাঝি এ নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে কংগ্রেসের পাশাপাশি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আইনসভা এবং গভর্নরের অফিসগুলোকে কে নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে এ নির্বাচন প্রেসিডেন্টের কর্মকান্ড এবং দেশের বর্তমান হালচাল সম্পর্কে পরোক্ষভাবে ভোটারদের মতামত প্রকাশের সুযোগ এনে দেয়। মার্কিন অর্থনীতির      বর্তমান সমস্যা এবং অপরাধ ও অবৈধ অভিবাসন নিয়ে ভোটাররা যখন উদ্বিগ্ন, তার মধ্যে নির্বাচনের এ রায় বর্তমান প্রেসিডেন্টের জন্য বেশ কঠোর হতে পারে। এ ছাড়া এই ফল ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ভোটের প্রচারণার ক্ষেত্রকে নানাভাবে প্রভাবিত করবে, বিশেষভাবে সেখানে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়।

এবারের এই নির্বাচনগুলো কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, তার পেছনে পাঁচটি কারণ রয়েছে-  ১. গর্ভপাতের অধিকার বা বিধিনিষেধ : মার্কিন কংগ্রেসের আকারে পরিবর্তন ঘটলে তা সারা দেশে আমেরিকানদের দৈনন্দিন জীবনকে সরাসরিভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এর একটি ভালো উদাহরণ হলো নারীদের গর্ভপাতের অধিকার। গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত নারীদের গর্ভপাতের অধিকার সংক্রান্ত আইনটিকে বাতিল ঘোষণা করে। মধ্যবর্তী মেয়াদের এ নির্বাচনে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে পারলে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট এবং বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি এ নিয়ে দেশব্যাপী নতুন আইন তৈরি করবে বলে প্রস্তাব করেছে। ২. রিপাবলিকানদের হাতে ডেমোক্র্যাটদের তদন্ত করার পালা : এবারের সংসদীয় নির্বাচন বিভিন্ন নীতির বাইরের কিছু বিষয়ের ওপরও প্রভাব ফেলবে। কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে সফল হলে বিভিন্ন বিষয়ে সংসদীয় তদন্ত কমিটি তৈরির ক্ষমতা হাতে চলে আসবে। গত দুই বছর ধরে হোয়াইট হাউস যে পরিমাণ যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন ছিল, ডেমোক্র্যাটরা তা সীমিত করে রেখেছে এবং তারা ২০২১ সালে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলের ওপর ৬ জানুয়ারির হামলাকে তাদের প্রাথমিক ফোকাসে পরিণত করেছে। ৩. জো বাইডেনের ভবিষ্যৎ : মধ্যমেয়াদি এ নির্বাচনকে সাধারণত প্রেসিডেন্টের মেয়াদের প্রথম দুই বছরের ওপর গণভোট হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যাতে ক্ষমতাসীন দলটি প্রায়শই মার খায়। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জনমত জরিপে মি. বাইডেনের রেটিং বেশ খারাপ ছিল। যদিও গ্রীষ্মকালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সৌভাগ্য কিছুটা ফিরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু এ নির্বাচনের প্রচারের চূড়ান্ত পর্বে মুদ্রাস্ফীতির উঁচু হার এবং অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা আবার ফিরে এসেছে। এর ফলে কংগ্রেসের উভয় কক্ষতে ক্ষমতা ধরে রাখা ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি কঠিন লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। ৪. ট্রাম্প যদি আবার দৌড়ে যোগদান করেন : সাম্প্রতিককালে অন্যসব পরাজিত প্রেসিডেন্ট রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প তেমনটি করেননি। তিনি এখনো ২০২৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার ব্যাপারে আগ্রহী বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। ফলে সংসদের এ মধ্যমেয়াদি নির্বাচন তার হাতকে হয় শক্তিশালী করবে বা তার সব আশা গুঁড়িয়ে দিতে পারে। যদিও এ নির্বাচনে তার ওপর কোনো ভোট হচ্ছে না, কিন্তু তার নির্বাচিত কয়েক ডজন প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রবীণ রিপাবলিকান নেতাদের আপত্তি সত্ত্বেও প্রথাগত রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জিয়ার সাবেক রাগবি খেলোয়াড় হার্শেল ওয়াকার, পেনসিলভেনিয়ায় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ডা. মেহমেত ওজ এবং ওহাইওর জনপ্রিয় লেখক জেডি ভ্যান্সের মতো কিছু সিনেট পদপ্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ৫. নির্বাচনের ফল অস্বীকারকারীরা কি ভোটে অংশ নেবে? : মার্কিন ক্যাপিটলে ৬ জানুয়ারির হামলা, যেটিতে ট্রাম্প সমর্থকরা জো বাইডেনের নির্বাচনী বিজয়কে কংগ্রেসের অনুমোদন আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তার পর এবারের সংসদীয় নির্বাচন হবে প্রথম কোনো ফেডারেল নির্বাচন। ওই দাঙ্গার পর চুপ থাকা তো দূরের কথা, ট্রাম্প অনবরত ওই নির্বাচনের ফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং সক্রিয়ভাবে সেসব রিপাবলিকান প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যারা বলেছেন যে, চুরি করে ট্রাম্পের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই, যেমন অ্যারিজোনায় রাজ্য মনোনীত সেক্রেটারি মার্ক ফিনচেম এবং নেভাডায় জিম মার্চেন্ট ও পেনসিলভেনিয়ার গভর্নর পদপ্রার্থী ডগ মাস্ট্রিয়ানো, এমন সব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যেখানে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় তাদের রাজ্যের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর