বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রতারণার টাকা হুন্ডি করে লন্ডনে পাচার

ব্রিটিশ নাগরিক গ্রেফতার

মাহবুব মমতাজী

লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন জানুয়ারিতে। এরপর অবস্থান করেন রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে। ৩১ জানুয়ারি থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত টানা অবস্থান করেন সেখানে। একে একে খুলতে থাকে তাকে ঘিরে নানা রহস্যের জট। হোটেল সোনারগাঁওয়ে থেকেই হাইটেক পার্ক নির্মাণে নিজেকে বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। ব্যবসায় অংশীদারিত্ব এবং চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় অর্ধশত মানুষের কাছ থেকে নিয়েছেন প্রায় ৩ কোটি টাকা। সব টাকাই তিনি হুন্ডি করে লন্ডনে পাচার করেছেন বলে জানতে পেরেছেন পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। ৩১ অক্টোবর রাজধানীর বনানী থেকে জাহিদ আহম্মেদ চৌধুরী নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ নভেম্বর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডের প্রথম দিন গতকাল জাহিদকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, জাহিদ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তার বাড়ি সিলেট সদরের কলকখালী বড়বাজারে।

এর আগে হাতিরঝিল থানায় ২৭ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে মামলা করেন হোটেল সোনারগাঁওয়ের চিফ অব সিকিউরিটি উম্মে সালমা। মামলা নম্বর-৪৯। এরপর ৩ নভেম্বর আরেকটি মামলা করেন ফোর ডিজিট এক্সপেরিয়েন্টাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসলিমা ফেরদৌস। মামলা নম্বর-৪।

হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ জানান, ওই ব্যক্তি প্রায় ৫০ জনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণের টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। আরও কিছু তথ্য বের করতে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উম্মে সালমা তার মামলায় অভিযোগ করেন, জাহিদ ৩১ জানুয়ারি থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি অতিথি হিসেবে তাদের হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করেন। তিনি হোটেলে দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানকালে সাময়িকভাবে বেশ কয়েকবার বাইরে অবস্থান করেছিলেন। যেহেতু নিজেকে সিলেটের অধিবাসী হিসেবে জানিয়েছিলেন, তাই ব্যবসায়িক কিংবা পরিবারিক প্রয়োজনে সাময়িকভাবে হোটেল ত্যাগ করে তিনি সিলেটে অবস্থানের কথা জানান। এর মধ্যে তিনি ১৩ আগস্ট হোটেলে এসে ৮০৯ নম্বর কক্ষে অবস্থান করতে থাকেন। ১০ অক্টোবর হোটেল ত্যাগ করেন। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ১৯ দিনের কক্ষ ভাড়া ২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং খাবারের বিল ৩ হাজার টাকাসহ মোট আড়াই লাখ টাকা হয়। জাহিদ হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার রবিন জে এডওয়ার্ডসকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বকেয়া রাখার জন্য অনুরোধ করেন। ওই দিন এসে তিনি হোটেল বিল পরিশোধ করবেন বলে জানান। অথচ ১২ অক্টোবরই তিনি হোটেল রিসিপশনের নম্বরে ফোন করে রিজার্ভেশন বাতিল করেন এবং ১৬ অক্টোবর বকেয়া পরিশোধ করবেন বলে জানান। এর পর থেকে তিনি তার মোবাইল ফোন ধরা বন্ধ করে দেন। তিনি বিভিন্ন সময় নিজেকে বাংলাদেশে হাইটেক পার্ক নির্মাণে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী বলে প্রচারণা করেন। তার কোম্পানির নাম বলেন ‘জেসিভা গ্রুপ ইউকে’। এ ছাড়া তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতারণার মাধ্যমে জাহিদ আহম্মেদ চৌধুরী যেসব টাকা হাতিয়েছেন সেগুলোর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সেগুলো হুন্ডির মাধ্যমে লন্ডনে পাচার করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাসলিমা ফেরদৌস তার এজাহারে অভিযোগ করেন, তার কোম্পানি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন কাজ করে। হোটেল সোনারগাঁওয়ের একটি অনুষ্ঠানে জাহিদ আহম্মেদ চৌধুরীর সঙ্গে মার্চে তার পরিচয় হয়। তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করে বিভিন্ন ব্যবসা করবেন বলে জানান। এ জন্য তিনি বিভিন্ন স্থানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। তার কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করাবেন বলে তাসলিমা ফেরদৌসের ভিজিটিং কার্ডসহ মোবাইল নম্বর নেন জাহিদ। ১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে থ্রি ডি প্রেজেন্টেশনের একটি অনুষ্ঠান করেন তিনি, যার বিল আসে ১০ লাখ ১৭ হাজার ৭৫০ টাকা। জাহিদ চৌধুরী সেই টাকা পরিশোধ করেননি। তিনি একসময় তাসলিমার কাছ থেকে ব্যক্তিগত লোন চান এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা রিলিজ হচ্ছে না বলে জানান। একই সঙ্গে বিপদে আছেন বলেও জানান। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর তাসলিমা তার কোম্পানির প্যাডে দুই দফায় জাহিদকে ২২ লাখ টাকা দেন। তিনি নিজে স্বাক্ষর করে সেসব টাকা গ্রহণ করেন। এর পর থেকে তিনি হোটেল থেকে চলে গিয়ে আত্মগোপনে থাকেন।

সর্বশেষ খবর