শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিএনপি কী বার্তা দেবে ১০ ডিসেম্বর

বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে স্মরণকালের বড় সমাবেশ করার লক্ষ্য

শফিউল আলম দোলন

বিএনপি কী বার্তা দেবে ১০ ডিসেম্বর

আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশে জনগণকে কী বার্তা দেবে বিএনপি। নেতা-কর্মীদের প্রতিই বা কী নির্দেশনা দেবে দলটি। কিংবা সরকারকে কোনো আলটিমেটাম অথবা নতুন কোনো কর্মসূচি থাকবে কি না এমন প্রশ্ন এখন জনমনে। দলের নীতিনির্ধারকরাও জানিয়ে দিয়েছেন তাদের মতামত। তারা জানান, সরকার বাধা না দিলে বিএনপি হার্ডলাইনে যাবে না। সেক্ষেত্রে ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে আলটিমেটাম দেওয়া হতে পারে, যা আগামী দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে চলমান আন্দোলনে গতি আনতে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু সরকার কঠোর হলে বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে। ‘রোডমার্চ’, ‘লংমার্চ’ কিংবা তার চেয়েও কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, সেদিন ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। টার্গেট ৫০ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম। এর মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে চায় দলটি। সব ধরনের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ করতে চায়।

জানা গেছে, আগামী ১০ ডিসেম্বরের ওই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলের ১১টি সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন ইউনিটে কর্মিসভা চলছে প্রতিদিন। সংগঠনের নয় বিভাগে গণসমাবেশ শেষ করার পর প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশাল জমায়েত ঘটিয়ে দেশে ও বিদেশে সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে চায় দলটি। সেক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে            স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ করতে চায় তারা। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর সরকার পতন আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি নয়। কারণ আমরা এখনো সরকার পতন আন্দোলন শুরুই করিনি। এটা আমাদের পূর্ব-ঘোষিত ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচির সর্বশেষ কর্মসূচি। আমরা প্রতিটি কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে চাই। তবে সরকার যদি তাদের কৃত কর্মের জন্য এতেই ভয় পায়- তাহলে তো আমাদের কিছুই করার নেই। ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি কোনো আলটিমেটাম দেবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা সেদিনই জানানো হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার সমাবেশে বাধা দেবে। কিন্তু সেই বাধা মানুষ মানবে না। যার প্রমাণ চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালের গণসমাবেশের জনস্রোত। তবে আমরা কোনো সংঘাত চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে রাজধানীতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় একটি মহাসমাবেশ করতে চাই। সেখান থেকে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মহাসমাবেশ নিয়ে বিভিন্ন রকমের চিন্তা-ভাবনা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ এবং সর্বশেষ শনিবার খুলনার গণসমাবেশে যেসব প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করতে হয়েছে, অন্য বিভাগের চেয়ে ঢাকার সমাবেশে তার চেয়ে বেশি বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করতে হবে। এ অবস্থায় সামনের কর্মসূচিগুলো কতটা শান্তিপূর্ণভাবে করা যাবে, তা নিয়ে অনেকটা সংশয় আছে। কারণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যেভাবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে- তা সরকারকে চাপে ফেলেছে। এ অবস্থায় বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও দলীয় নেতাদের সবাইকে শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সমাবেশ সুশৃঙ্খল করতে ১ হাজার নেতা-কর্মীকে নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। নজরদারি করতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিসি ক্যামেরা ও ড্রোনও ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দলটির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, বিগত সময়ে দেখা গেছে, বিএনপি হরতাল ডাকলে ক্ষমতাসীনরা পরিবহন মালিকদের গাড়ি চালাতে বাধ্য করেছে। আবার সমাবেশ ডাকলে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহ, রংপুর, খুলনা ও বরিশালের সমাবেশের আগে একই ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি নেতাদের ধারণা অবশিষ্ট বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোসহ রাজধানী ঢাকার মহাসমাবেশের আগে গণপরিবহন বন্ধ করা হতে পারে। এসব বিষয়ে নেতা-কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে- নানা ধরনের দিক-নির্দেশনা।  বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, কয়েকটি বিভাগীয় গণসমাবেশের জনসমাগম দেখার পর সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে- তারা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আছেন। এ কারণে ক্ষমতাসীনরা বিএনপির কর্মসূচি প- করতে নানা ধরনের অজুহাত বা প্রচেষ্টা চালাতে পারেন। অথবা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে জড়াতে উসকানি দিতে পারেন। সেই ব্যাপারে বিএনপি সতর্ক ও সজাগ রয়েছে।  বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ নিয়ে সরকার রীতিমতো আতঙ্কিত। কারণ সেদিন রাজধানীতে দেশের স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ সেদিন রাজধানীতে উপস্থিত হবেন। আর সেখান থেকেই দেওয়া হবে পরবর্তী দিক-নির্দেশনা। দেশবাসীর জন্য নতুন বার্তা। এ জন্য সরকার ভয় পাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ঢাকা মহানগরীতে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ করতে চাই। সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে এটি। আশা করি গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকার কোনো রকমের বাধা দেবে না। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোনো রকমের বাধা দেওয়া হলে জনসাধারণও সেক্ষেত্রে বিকল্প পথ অনুসরণ করতে বাধ্য হবেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সেদিন ঢাকায় কল্পনাতীত একটি সমাবেশ হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, জনগণের সমস্যা সমাধানের দাবিতে আমরা এসব কর্মসূচি পালন করছি। আশা করি সরকার সেগুলো মেনে নেবে।   

বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, এই সরকারকে ঘৃণা জানানোর জন্য মানুষ প্রস্তুত। সমাবেশ সফল করতে ঢাকা বিভাগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সেদিন ঢাকায় উপচে পড়বেন। সরকারকে বাধা না দেওয়ার জন্য আহ্বান থাকবে। তারপরও বাধা দিলে তা উপেক্ষা করেই সরকারকে বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে লাখ লাখ মানুষ এই সমাবেশে অংশ নেবেন।

জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগরীসহ বিভাগটির সব সাংগঠনিক জেলায় বিভিন্ন ইউনিটে প্রস্তুতি সভা করেছেন নেতারা। অন্যান্য গণসমাবেশ সফল করতে দলের পক্ষ থেকে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ঢাকার ক্ষেত্রেও তা অপরিবর্তিত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির নেতারা এসব বিষয় সমন্বয় করছেন।

সর্বশেষ খবর