শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভারতকে উড়িয়ে ফাইনালে ইংল্যান্ড

মেজবাহ-উল-হক

ভারতকে উড়িয়ে ফাইনালে ইংল্যান্ড

ভারতকে কোনো সুযোগই দেয়নি ইংল্যান্ড। ১০ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেল জস বাটলারের দল। ঐতিহাসিক মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রবিবার ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।

অ্যাডিলেডে সেমিফাইনালের লড়াই জমিয়ে তুলতে পারেননি ভারত। প্রথমে ব্যাট করে রোহিত শর্মার দল করে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান। ১৬৯ রানের টার্গেটকেও কাল ‘ডাল-ভাত’ বানিয়ে ফেলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার অ্যালেক্স হেলস ও জস বাটলার। ২৪ বল হাতে রেখে বিনা উইকেটে জিতে যায় তারা।

দুই ইংলিশ ওপেনারের কী অসাধারণ ব্যাটিং! যেমন অ্যালেক্স হেলস, তেমন জস বাটলার। ভারতীয় বোলারদের বিরুদ্ধে দুই ব্যাটসম্যান যেন নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। কে কার চেয়ে বেশি ছক্কা-বাউন্ডারি হাঁকাতে পারে, কে কাকে ছাপিয়ে যেতে পারেন! হেলস খেলেছেন মাত্র ৪৭ বলে ৮৬ রানের হার না মানা বিস্ফোরক ইনিংস। চার মাত্র ৪টি, আর ছক্কা সাতটি। আরেক ওপেনার বাটলার খেলেছেন ৪৯ বলে ৮০ রানের আরেকটি বিধ্বংসী ইনিংস। ৯টি চারের সঙ্গে তিনটি ছক্কা ছিল ইংলিশ ক্যাপ্টেনের ইনিংসে। যে হেলস ইংলিশদের বিশ্বকাপ ভাবনাতেই ছিলেন না, জনি বেয়ারস্ট্রোর ইনজুরির কারণে দলে সুযোগ পাওয়া মারকুটে ব্যাটসম্যানই অ্যাডিলেডে দেখালেন জাদু। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ বোধহয় ইংল্যান্ডেরই। দলের ১১জনই ব্যাটসম্যান। তাই শুরু থেকেই নির্বিঘ্নে ঝুঁকি নিয়ে শট খেলতে পারেন দুই ওপেনার। দুই ওপেনারের ভয়-ডরহীন ব্যাটিংয়ের পুরস্কারও হাতেনাতেই পাচ্ছে ইংলিশরা। কালকের দিনটি ছিল হেলস ও বাটলারের। যেভাবে তারা ব্যাট চালিয়েছেন, ভারতীয় বোলাররা যেন খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে। ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় একবারের জন্যও মনে হয়নি রোহিতদের কোনো সম্ভাবনা আছে। পুরো সময় দুই ব্যাটসমম্যান উড়াধুরা স্টাইলে ব্যাটিং করেন। অবশ্য কোহলিরা কাল হেরে গেছেন তাদের ব্যাটিংয়ের সময়ই। অ্যাডিলেডের উইকেটকে বলা হয় ব্যাটিং স্বর্গ। অথচ ভারতের শুরুটা কতই না ধীরগতির! পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৩৮ রান। বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও প্রথম ১০ ওভারে কাল রোহিত শর্মারা করেছেন মাত্র ৬২ রান। আর পরের ১০ ওভারে এসেছে ১০৬ রান। অ্যাডিলেডের উইকেটে যে জু জু ছিল না বোঝার জন্য ইংল্যান্ডের স্কোর কার্ডের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই, লোয়ার অর্ডারে নামা ভারতীয় ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়াই তো মাত্র ৩৩ বল খেলে ৬৩ রান করেছেন। অথচ একই উইকেটে ভারতীয় ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা ২৮ বলে করেছেন ২৭ রান। একপ্রান্তে বিরাট কোহলির মতো নির্ভরতার প্রতীক থাকার পরও রোহিত উইকেটে ঝড় তুলতে পারেননি। শুধু রোহিত কেন, ওপেনার লোকেশ রাহুল ৫ রানেই ফিরলেন প্যাভিলিয়নে। এমন দিনে সূর্যের আলো থেকেও বঞ্চিত ভারত! টি-২০র সেরা ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব ১৪ রানেই ফিরে গেছেন সাজঘরে। দুই দলের ব্যাটিংয়ে যোজন যোজন ব্যবধান। দলীয় ১০০ রান করতে ভারত যেখানে ১৫ ওভার পর্যন্ত খেলেছে, সেখানে ১০ ওভারেই (১০.১ ওভার) দলীয় শতক পূরণ করে ইংল্যান্ড। অ্যাডিলেডের উইকেটে বোলারদের বেশি কিছু করার নেই। তারপরও ইংলিশ বোলাররা দারুণ সফল। আদিল রশিদ তো তার চার ওভারের কোটায় মাত্র ২০ রান দিয়েছেন। তবে ভারতের বিদায়ের দিনেও উজ্জ্বল ছিলেন বিরাট কোহলি। এ ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। এই বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি কোহলির। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এখন তিনি। কিন্তু দলের হারের পর ব্যক্তিগত অর্জন নিয়ে খুব একটা আগ্রহ থাকে না। তাই কোহলির এমন অবাক করা ধারাবাহিকতায় কোনো লাভ হলো না। এদিকে ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে দারুণ উজ্জীবিত ইংল্যান্ড। ২০১০ সালের টি-২০ চ্যাম্পিয়নরা ২০১৬ সালে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের খুব কাছে গিয়েও পারেনি। উইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে স্বপ্নভঙ্গ হয়। তবে শিরোপা জয়ের মিশন নিয়েই অস্ট্রেলিয়ায় পা রেখেছে ইংল্যান্ড। ক্যাপ্টেন বাটলারের কথাতেও আগ্রাসী ঝাঁঝ, ‘ইংল্যান্ড খুবই বিপজ্জনক দল। আমাদের লক্ষ্য থাকে আগ্রাসীভাবে শুরু করা। আমরা শিরোপা জয়ের জন্যই এখানে এসেছি।’

ফাইনালের আগে পাকিস্তানকে যেন হুমকি দিয়ে রাখলেন বাটলার!

সর্বশেষ খবর