শিরোনাম
শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ষড়যন্ত্র করে অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

ষড়যন্ত্র করে অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না

যুবলীগের ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বিশাল সমাবেশের একাংশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করলেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। ওরা যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এগিয়ে যাব। বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি হলেও বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না। তবে তার জন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত যুব মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। করোনার কারণে তিনি দীর্ঘ আড়াই বছর পর এই প্রথম রাজধানীতে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যাদের নেতৃত্বে আজ বিএনপি চলে তারা কারা? খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট করেছিলেন। একটি টাকাও এতিমরা পায়নি। এক পয়সাও না দিয়ে সমস্ত টাকা তারা মেরে খেয়েছে। সে কারণে খালেদা জিয়ার ১০ বছরের সাজা হয়েছে। তারপর যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উনি তো আরও এক ধাপ এগিয়ে। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক জিয়ার সাত বছরের সাজা হয়েছে। এফবিআই এসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। এ ছাড়া গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তারেক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। যাদের নেতা খুনি-আসামি তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা মানায় না। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ক্ষমতায় এসে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছেন; যাদের লাশও পাওয়া যায়নি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই ২০০১ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে হাজার হাজার নেতা-কর্মী হত্যা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এইট পাস দিয়ে, ম্যাট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চললে উন্নয়ন হয় না। আমরা ক্ষমতায় আসার আগে সরকারে ছিল বিএনপি। তাদের সময় রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। আমরা সরকারে আসার পর রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত নিয়েছিলাম। কভিড টিকা কিনেছি, বিনিয়োগ করেছি, বিমান কিনেছি, পায়রা বন্দর নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। এভাবে রিজার্ভ থেকে খরচ হয়েছে। ঘরের টাকা ঘরে থাকছে। দেশের জনগণের উন্নয়নে এ টাকা ব্যবহার করছি।

প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীতে বর্ণাঢ্য যুব মহাসমাবেশ করল যুবলীগ। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের বিপরীতে কয়েক লাখ মানুষের ঢল নামিয়ে স্মরণকালের বড় জমায়েত করে শোডাউন করল ক্ষমতাসীনরা। গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা ও সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। মহাসমাবেশ সফল করতে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও সমাবেশে যোগ দেন। দুপুরের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিণত হয় বর্ণিল জনসমুদ্রে। পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। আশপাশের সড়কগুলোয়ও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বিশাল এ জনস্রোতের সামনে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব ঐক্যবদ্ধভাবে দেওয়া হবে। তাঁরা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ পালাবার দল নয়। খেলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুঃশাসন, লুটপাটের বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে, আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে।

মৎস্য ভবন, শাহবাগ, টিএসসি, পলাশী মোড়, বকশীবাজার রোড, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার- সবখানে শুধু মানুষ আর মানুষ। শেখ মণির হাতে গড়া যুবলীগের ৫০তম জন্মদিন অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সারা দেশ থেকে আসা সংগঠনটির নেতা-কর্মী-সমর্থক, শুভাকাক্সক্ষী নিজ নিজ ইউনিটের পছন্দ ও মনোনীত রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে হাজির হন। কোনো ইউনিট লাল রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ, কোনো ইউনিট সবুজ, কোনো ইউনিট কমলা, কোনো ইউনিট হলুদ, কোনো ইউনিট নীল, কোনো ইউনিট কোনো ইউনিট গোলাপি, কোনো ইউনিট বেগুনি রং পরে পুরো আয়োজনকে রংধনু রঙে রাঙিয়ে দেয়।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ যুবলীগ নেতা-কর্মীদের পরনে ছিল লাল টি-শার্ট ও টুপি। ঢাকা উত্তর যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মাথায় ছিল সবুজ টুপি, হাতে দলীয় পতাকা। ঢাকার বাইরের জেলা-উপজেলা কমিটির নেতা-কর্মীরা আলাদা রঙের টি-শার্ট ও টুপি পরে এসেছিলেন। বিভিন্ন জেলা-মহানগরের পদপ্রত্যাশীদের ছবি নিয়েও আলাদা মিছিল নিয়ে অনেকে মিলিত হন সোহরাওয়ার্দীতে।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণে ৬০ হাজার লাল টি-শার্ট বিতরণ করের্ছিলেন যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। তার কর্মী-সমর্থকরা সকাল থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ড-থানা থেকে খন্ডখন্ড মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাজির হন। সমাবেশে ছিল লাল টি-শার্ট পরিহিত যুবনেতাদের আধিক্য। সম্মেলনস্থল ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সম্রাটের ছবিসংবলিত পোস্টার-ফেস্টুন চোখে পড়ে। এ সমাবেশে ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছিল যুবলীগ। যুবলীগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট, থানা, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা সমাবেশে যোগ দেন।

জুমার নামাজের সময় হলে নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই জামাতের আয়োজন করেন। এ মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ ও ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা নিপুণ ও অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। চঞ্চল চৌধুরী তাঁর হাওয়া সিনেমার জনপ্রিয় ‘সাদা সাদা, কালা কালা’ গেয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাতিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে আসেন ২টা ৩৮ মিনিটে। সভামঞ্চের সামনে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে নিয়ে উত্তোলন করেন দলীয় পতাকা। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে, জাতীয় সংগীত গেয়ে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে আসতেই ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’, ‘ধন্য পিতার ধন্য কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘আজকের এই দিনে পিতা তোমায় মনে পড়ে’, ‘আজকের এই দিনে, মণি তোমায় পড়ে মনে’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয় উদ্যান।

আওয়ামী লীগ সভাপতিকে সভামঞ্চে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। প্রধানমন্ত্রীর হাতে তাঁরা ক্রেস্ট তুলে দেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি উড পেইন্টিং (কাঠের শিল্পকর্ম) শেখ হাসিনাকে উপহার দেন যুবলীগ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা। কাঠ খোদাই করা বঙ্গবন্ধুর ছবি উপহার দেন ঢাকা উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। যুবলীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুক্তা আক্তার প্রধানমন্ত্রীকে পরিয়ে দেন উত্তরীয়। এরপর যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর লোগো, সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন এবং ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়। এরপর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। প্রথম অংশ পরিচালনা করেন যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জয়দেব নন্দী। সাংস্কৃতিক পর্ব সঞ্চালনা করেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ। এতে প্রথমে সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘আমার পরিচয়’ কবিতা আবৃত্তি করেন শিমুল মুস্তফা, যুবলীগ ‘শান্তির সারথি’ শিরোনামে এক নৃত্য পরিবেশনা করা হয়। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিশেষ গান ‘বাঙালির নয়নমণি’ এবং জাতির পিতা ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা-তুমি হৃদয়ের বাতিঘর’ গাইলেন শিল্পী মমতাজ বেগম এমপি। এ সময় যুবলীগের পতাকা নেড়ে গানটির সঙ্গে সুর মেলান উপস্থিত লাখো মানুষ।

তৃতীয় পর্বে পরিচালনার দায়িত্ব পালন ও স্বাগত বক্তব্য দেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এরপর ’৭১-এর সব শহীদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে নিহত সব শহীদ ছাড়াও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত যুবলীগের সাবেক নেতাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর কোরআন তিলাওয়াতসহ ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। পরে শুরু হয় বক্তৃতা পর্ব।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ। যুব মহাসমাবেশে যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সব নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির ছোট ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মঞ্চে ছিলেন। বিকাল ৪টা ৪৩ মিনিটে শুরু করে ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক ইঞ্চিও যেন অনাবাদি না থাকে : দেশের কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে সেজন্য নিজ গ্রামে গিয়ে যুবদের অনাবাদি জমি কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। আজকের যুবকদের দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে। যেহেতু ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) পাল্টা স্যাংশন। আমাদের আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। যুবদের বলব, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। নিজের গ্রামে গিয়ে প্রতিটি জমি কাজে লাগাতে হবে। চাষ করতে হবে, যেটাই হোক।

এ সময় যুবলীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোনো দিন যাতে দুর্ভিক্ষ না হয় সেজন্য সব জমিতে চাষ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যদেরও বিরত রাখতে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আজকের যুবসমাজকে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজ করতে হবে।

আমাদের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে বলেছিলেন শ্রীলঙ্কা হবে, এটা হবে-সেটা হবে। তাদের মুখে ছাই পড়েছে। সেটা হয়নি। সেটা হবেও না। কিন্তু আমাদের কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। উন্নত বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশকে কেউ এখন আন্তর্জাতিকভাবেও অবহেলার চোখে দেখে না। প্রত্যেকে বলে এত কিছুর পরও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ যুবদের কর্মসংস্থান দিয়েছে, বিএনপি হত্যা করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে নাকি আমাদের উন্নয়ন চোখে দেখে না। চোখ থাকতে অন্ধ হলে দেখবে কী করে! আমরা কত যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছি। আর জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া? সবই তো একই ইতিহাস। হাজার হাজার যুবনেতাকে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, যুবলীগ আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে আছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে যুবদের একটা অবস্থান আছে। তাই বঙ্গবন্ধু যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই জাতির পিতা ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ৭ মার্চের ভাষণ দেন। আজ এখানে বলতে চাই- আমি এ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে চাই। তরুণরাই এতে নেতৃত্ব দেবে।

যুবলীগের কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুবলীগ ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষদের ঘর করে দিয়েছে। করোনাকালে তারা যথেষ্ট কাজ করেছে। রোগীর চিকিৎসা, লাশ দাফন, ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কাজে তারা উদ্যোগী হয়েছে। ঝড়বন্যায় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো মানবতার ডাকে ছুটে গিয়েছে। কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে। যুবলীগসহ সব সংগঠন ধান কেটে দিয়েছে। বৃক্ষরোপণের আহ্বান করেছি, যুবলীগ লাখ লাখ বৃক্ষচারা রোপণ করেছে। এভাবে মানুষের পাশে আমাদের এখনো দাঁড়াতে হবে।

যুবলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তরুণের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। যুবকদের আজ দেশ গড়ার কাছে মনোযোগী হতে হবে। আমাদের দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করতে হবে। আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এজন্য আহ্বান করেছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যুবলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে যারা এখানে আছেন বা বাইরে আছেন, সবাইকে বলব, নিজের গ্রামে যান। গ্রামের কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সেটা দেখতে হবে। যেসব জমি অনাবাদি পড়ে আছে সেগুলো যাতে চাষ হয়। গাছ লাগানো হোক। ফসল ফলানো হোক। তরিতরকারি, সবজি যা যা দরকার চাষ করতে হবে। নিজের জমি চাষ করতে হবে। অন্যের জমিও যেন উৎপাদনশীল হয় সে ব্যবস্থা প্রতিটি যুবলীগ কর্মীকে করতে হবে।

তিনি বলেন, সেই সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার জন্য সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক থেকে যুবসমাজ যেন দূরে থাকে। কোনোমতেই যেন কেউ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। তার জন্য যুবলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে অঙ্গীকার করতে হবে। সেভাবেই কাজ করতে হবে। যুবসমাজের মাঝে চেতনা গড়ে তুলতে হবে। সেই চেতনায় বাংলাদেশের উন্নতি হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি মানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।

অন্যরা যা বললেন : মহাসমাবেশে যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, যারা সমাবেশে লোকের উপস্থিতি দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে গেছেন, মনে করেছেন এতেই ক্ষমতায় চলে আসছেন। তারা আজ দেখেন, আপনাদের কথা আর দুই-একটা কর্মসূচিতে সরকার পড়ে যাবে না। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন ফুঁ দিলেই উড়ে যাবে না। তিনি বলেন, আপনারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। অনেক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। শত শত নারীর সম্ভ্রম আপনারা নষ্ট করেছেন। এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ যুবসমাজ ঐক্যবদ্ধ।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘খেলা হবে। খেলা হবে। হবে খেলা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। লুটপাটের বিরুদ্ধে। খেলা হবে বিএনপির বিরুদ্ধে। আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে। তৈরি হয়ে যান। প্রস্তুত হয়ে যান। জবাব দেব।’ সফল আয়োজন করার জন্য যুবলীগকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কাদের বলেন, ‘যুবলীগ কথা দিয়ে কথা রাখে। তার প্রমাণ এটা যুব সমাবেশ নয়, এটা মহাসমুদ্র। যুব-জনতার মহাসমুদ্র। এদিকে সেদিকে মানুষ। চারদিকে শুধু যুব-জনতার ঢল। আজকের এই দিনে তাদের আমি ৫০ বার অভিনন্দন জানাই।’

বিএনপির ১০ ডিসেম্বর সরকার পতনের স্বপ্নকে পাগলের প্রলাপ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ওরা ভয় দেখায়। হুমকি মারে। ১০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার পতন ঘটাবে। তারেক জিয়া দেশে আসবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় চলে যাবে। আরে পাগলে কি না বলে ছাগলে কি না খায়! তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) বলে ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ পালাবার দল নয়। তারেক জিয়া পালিয়ে লন্ডনে ১৫ বছর আছে। ‘প্রিয়’ ফালু পালিয়ে বিদেশে আছে। তোরা পালিয়ে পাকিস্তানে যেতে পারিস। আমরা এই মাটি-মানুষের দেশ ছেড়ে পালাতে জানি না।

বিএনপিকে সতর্ক করে দিয়ে সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেননি। তিনি সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আজকে সজাগ। যুবলীগের ছেলেদের সজাগ থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়তে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিএনপি ছাগলের বাচ্চার মতো শুধু লাফাবে। আর পারলে দেশ ছেড়ে পালাবে। নিজেদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি করা যাবে না।

সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ক্লিনহার্ট অপারেশনের নামে শত শত যুবলীগ নেতা-কর্মী হত্যা করেছিলেন। আজকে তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বাংলাদেশে আতঙ্ক ছড়াতে চান। তাদের যথাযথ জবাব দিতে প্রস্তুত এই যুবসমাজ।

তিন দাবি পরশের : যুবলীগ নেতা-কর্মীদের কাছে তিন দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। তিনি বলেছেন, এই মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে যুবলীগের সহকর্মীদের কাছে তিন দাবি রাখতে চাই। সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে, ভাই-ভাইয়ের সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করে, নিঃশর্তভাবে ঐক্যের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যদি ঐক্য-সমন্বয় থাকে তাহলে কোনো যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদরের বংশধর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে পরাজিত করতে পারবে না।

আরেকটা দাবি রাখতে চাই- যে উন্নয়ন বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের এ দেশকে দিয়েছেন, সেই অর্জনগুলোকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জনসংযোগ বাড়াতে হবে এবং মানুষকে জ্ঞাত করতে হবে। বিএনপির মিথ্যাকে আমাদের সত্য দিয়ে ঢাকতে হবে এবং সত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিএনপিকে আমরা পরাজিত করব।

যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘শেষ দাবি- প্রায় ১৪ বছর আমরা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আছি। আর ১৪ মাস ক্ষমতায় আছি। অনেক নিশ্চিন্তে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। অনেক শান্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রেখেছেন। আগামী ১৪ মাস বিনিদ্র রাত কাটিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আনতে হবে।

লজ্জা পাবেন না : যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব সম্প্রতি বরিশালে গিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলেছেন। মজার ব্যাপার, তিনি কিন্তু বরিশালে পদ্মা সেতু দিয়ে যাননি। প্লেনে গেছেন। আমি ফখরুল সাহেবকে বলতে চাই, পদ্মা সেতু ব্যবহার করতে লজ্জা পাবেন না। শেখ হাসিনার উন্নয়ন সবার জন্য।

তিনি বলেন, আপনারা, আপনার অনুসারীরা কি মেট্রোরেলে উঠবেন না? পদ্মা সেতুতে উঠবেন না? তারা কি চার লেন হাইওয়ে এড়িয়ে যাতায়াত করবেন? আসলে আপনি তো শেখ হাসিনার উন্নয়ন ব্যবহার করতে বাধ্য। কারণ, আপনাদের নেতা বসবাস করেন বিলাতে। আপনি যখন থার্ড টার্মিনাল দিয়ে লন্ডনে যাবেন অগ্নিসন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র করতে, পরিকল্পনা করতে তখন কী দিয়ে যাবেন? ওই উন্নয়নটাও শেখ হাসিনার। তাই আপনাদের বলতে চাই- সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন।

শেখ পরশ বলেন, বিএনপির সময় বাংলাদেশকে বলা হতো ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড অব টেররিজম’। সেখান থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এখন বলা হচ্ছে ‘নেক্সট এশিয়ান টাইগার’। উন্নয়নের পুরোটাই নেতৃত্বের দূরদর্শিতার ওপর নির্ভর করে এবং শেখ হাসিনা তার প্রমাণ রেখে চলেছেন।

সর্বশেষ খবর