শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি উধাও

বেহাত কয়েক হাজার একর জমি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে : সচিব

আকতারুজ্জামান

সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার একর জমি উধাও হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ে অনেক স্কুল-কলেজ-মাদরাসার জমির হিসাব মিলছে না। আবার কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে যতটুকু জমি রেকর্ডে রয়েছে তা বাস্তবে নেই। শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি অন্য কেউ দখলে নিয়ে ভোগ করছেন অথবা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে স্কুল-কলেজের জমি কেউ বিক্রি করে দিচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) একটি প্রতিবেদন বলছে- গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে তার মধ্যে ৮৬৯ একর জমি বেহাত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এসবের মধ্যে স্কুল-কলেজের জমি রয়েছে ৫৭৬ একর আর কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি রয়েছে ২৯৩ একর। সে হিসাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হাজার হাজার একর জমি বেহাত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ডিআইএ-এর যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক অনিয়ম রয়েছে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সেগুলোতে বিদ্যমান নানা অনিয়ম চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ আকারে সরকারের কাছে পেশ করি আমরা। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য যে জিনিস সবার আগে প্রয়োজন তা হচ্ছে জমি। নির্ধারিত পরিমাণ কাম্য জমি না থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমতিও পাওয়া যায় না। কিন্তু আমরা খেয়াল করছি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে, কেউ কেউ বিক্রি করে দিচ্ছেন। এগুলো খুব খারাপ দৃষ্টান্ত। এ অনিয়মগুলো বন্ধের জন্য নিয়মিত সরকারের কাছে সুপারিশ করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে অনেক অনিয়মই কমে যাবে, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের এ যুগ্ম পরিচালক আরও বলেন, আমরা মনে করছি আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের জমি বেহাত আছে, অনেক জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। এগুলো উদ্ধার হওয়া প্রয়োজন। সূত্র জানায়, বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলাধীন আলাদীপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা গত জুনে পরিদর্শন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটিতে মোট জমির পরিমাণ রয়েছে ৬ দশমিক ৮ একর। এর মধ্যে ৫ দশমিক ৮৯ একর জমি প্রতিষ্ঠানের নামে খারিজ করা হয়েছে। ডিআইএ বলছে, এর আগে আরেক পরিদর্শনে মাদরাসাটিতে জমির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক সাড়ে ৬৪ একর। সে হিসাবে এ মাদরাসার বেহাত হওয়া জমির পরিমাণ ২ দশমিক সাড়ে ৮৪ একর। এই জমি উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ড করতে বলা হয়েছে ডিআইএ-এর পক্ষ থেকে। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে পান্টি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে রেকর্ড অনুযায়ী জমির পরিমাণ এক দশমিক ৪ একর। অথচ এর আগে ডিআইএ আরেক পরিদর্শন প্রতিবেদন বলছে- এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৬ একর। প্রতিষ্ঠানটিতে দৃশ্যমান জমি কমেছে শূন্য দশমিক ২ একর। গত ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো ডিআইএ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়,  নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা আবুল হাসেম উচ্চবিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক শূন্য ১ একর। ২০১৫ সালের পরিদর্শনে এ স্কুলে জমির পরিমাণ দেখানো হয় ১ দশমিক ৫১ একর। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন ১ দশমিক ৫ শতাংশ জমি কম রয়েছে বলে ডিআইএ জানিয়েছে। হ্রাসকৃত জমি প্রতিষ্ঠানের দখলে এনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে। একইভাবে গত মে মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ডিআইএ বলছে, ঢাকা জেলার ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন ধামাকোট আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ জমি হ্রাস পেয়েছে। হ্রাস পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যাসহ এ জমি উদ্ধারপূর্বক রেকর্ড মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে ডিআইএ-এর পক্ষ থেকে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত জমি থেকে জমি কমে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিবেদন দেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি বেহাত হওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর