মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সরকার রিজার্ভ নিয়ে বসে থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

সরকার রিজার্ভ নিয়ে বসে থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রিজার্ভের টাকা নিয়ে অলস বসে থাকবেন না। বরং তা জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করবেন। আমাদের জনগণের ভোগান্তি কমাতে হবে।

গতকাল দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) নবনির্বাচিত ৫৯ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের শপথবাক্য পাঠ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের মোট ৬২৩ জন সদস্যও শপথ নেন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জেলা পরিষদের নির্বাচিত এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। খবর বাসস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ একটা কথা এসেছে রিজার্ভের টাকা নাকি নাই, চুরি হয়ে গেছে। এই চুরি কীভাবে সম্ভব উল্লেখ করে বিএনপি আমল এবং বর্তমানের রিজার্ভের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, রিজার্ভের টাকা খরচ হয়েছে মানুষের কল্যাণে, তাদের প্রয়োজন মেটাতে।

সরকারপ্রধান বলেন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার রিজার্ভ পেয়েছিল প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের মতো, যেটাকে বাড়িয়ে তার সরকার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে। আর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ যেটা ৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছিল, সেটাকে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে। তিনি বলেন, রিজার্ভের টাকা সবসময় খরচ হতে থাকে, এটা রোলিং করে। কিন্তু করোনার সময় আমদানি, রপ্তানি, যোগাযোগ, যাতায়াত সবকিছু একরকম বন্ধ ছিল বলেই রিজার্ভ এতটা জমা পড়েছিল। কিন্তু করোনা শেষ হয়ে গেলে আমদানি-রপ্তানি এমনকি চাষবাসের জন্য মেশিনারিজ ক্রয়ে টাকা ব্যয় করতে হয়। করোনার ভ্যাকসিন ক্রয় এবং বিনামূল্যে টেস্ট করাসহ আনুষঙ্গিক খাতেও অর্থ ব্যয় করতে হয়। এভাবেই এ টাকা ব্যবহার হয়েছে মানুষের কল্যাণে। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের তাদের এলাকাকে খাদ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বী করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন, যাতে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা যায়। সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তাদের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র রয়েছে, অনেক দল রয়েছে। কেউ দল থেকে বা কেউ আলাদাভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, যখন আপনি ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তখন আপনার দায়িত্ব  সবার জন্য। শেখ হাসিনা নিজের উদাহরণ টেনে বলেন, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কে তাকে ভোট দিল আর কোন এলাকার ভোটার সেটা দেখেননি। তিনি বলেন, আমরা ৬১টি জেলা পরিষদে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব খাতের আওতায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা এবং এডিপির আওতায় ৫৪০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিচার প্রাপ্তি সহজ করতে ২৭টি জেলার ১৩৫টি উপজেলার ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) বাস্তবায়ন করেছে। মানুষ যাতে ন্যায় বিচার পায় সেজন্য আলাদা ফান্ড দিয়ে লিগ্যাল এইড কমিটি করে দিয়েছি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন যতভাবে করা যায় তা করেছি। তিনি বলেন, করোনা যেতে পারেনি, শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন। প্রতিটি পণ্যের দাম সারা বিশ্বে বেড়ে গেছে। চাল, গম, ভোজ্য ও জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে এর পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত দামে ক্রয় করতে হলেও আমরা তো দেশের মানুষকে কষ্ট দিতে পারি না, যেখানে যত দামই লাগুক আমরা কিন্তু কিনে নিয়ে আসছি। মানুষকে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে ১ কোটি মানুষকে আমরা স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহ করছি। ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করছি। যারা একেবারে অপারগ তাদের বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করছি। সেই সঙ্গে ৮ বিলিয়ন ডলার আমরা আলাদাভাবে বিনিয়োগ করেছি। আধুনিক বিমান ক্রয় করেছি। এটা আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়েই করেছি, অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার নেইনি। কারণ সেখানে ধার নিলেও সেটা সুদসহ শোধ দিতে হতো। সেই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিমান নিয়েছে এবং ২ শতাংশ সুদে সেই টাকা আবার ফেরত দিচ্ছে। ফলে দেশের টাকা দেশের থাকছে। রপ্তানি ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়ায় টাকা খরচ হচ্ছে যাতে আমাদের লোকই লাভবান হচ্ছে। কাজেই টাকা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। আমার দেশের মানুষের জন্য খরচ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির অনেক নেতা মানি লন্ডারিংয়ের কথা বলেন, তারেক জিয়ার শাস্তি হয়েছে মানি লন্ডারিং কেসে। তার বিরুদ্ধে আমেরিকা থেকে এফবিআই এর লোক এসে বাংলাদেশে সাক্ষী দিয়ে গেছে। মানি লন্ডারিং কেসে সাত বছর সাজা, ২০ কোটি টাকা জরিমানা আর গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি তার জন্যও সে সাজাপ্রাপ্ত। যাদের নেতাই হচ্ছে খুন, মানি লন্ডারিং ও অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারি মামলার আসামি। আর খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজা প্রাপ্ত। তিনি বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রে সাজাপ্রাপ্তদের নেতা হওয়ার বিধান না থাকলেও সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই দলটির মূল পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বিএনপির অপপ্রচারে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপপ্রচার চালানোই বিএনপির চরিত্র। তিনি বলেন, আমি আশা করি আমাদের নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভিতরে ওটাই থাকতে হবে যে মাটি মানুষ দিয়েই আমরা উন্নতি করতে পারি। কাজেই সেই আদর্শ নিয়েই আপনারা চলবেন। তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েছেন ভোগ দখলের জন্য নয়, জনগণের সেবা দেওয়ার জন্য। আপনারা জনগণকে সেবা দিয়ে তাদের মন জয় করতে পারেন অথবা জনগণের অর্থ-সম্পদ লুট করে চিরদিনের জন্য বিদায় নিতে পারেন, এটা হলো বাস্তবতা। আমি চাই যেহেতু জনগণ আপনাদের ভোট দিয়েছে তাই জনগণকে সেবা দিয়ে তাদের মন জয় করে দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করুন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এই নিয়ে চতুর্থ বার ক্ষমতায়। আমরা মানুষের কল্যাণেই কাজ করে যাচ্ছি। আর এদেশের মানুষকে আমি চাই একটা উন্নত জীবন দিতে। একটি লোকও দরিদ্র, গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না, কেউ অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবে না, প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। তিনি সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের দিকেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর