বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
আদালত অবমাননা আইন বাতিল

রায়ের ৯ বছর পর প্রকাশ পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আদালত অবমাননা আইন, ২০১৩ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে অবৈধ ও বাতিল করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে ৯ বছর পর। ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের দেওয়া ওই রায়ের ৩৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গতকাল হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে আদালত অবমাননা আইন, ২০১৩ পাস হয়। ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননার আইন রহিত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশিত হয়। পরে একই বছর ২৫ মার্চ নতুন আইনের ৪, ৫, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৩(২) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দুই আইনজীবী রিট আবেদন করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছর ৩ এপ্রিল হাই কোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাই কোর্ট।

আইনের ৪ ধারায় নির্দোষ প্রকাশনা বা বিতরণ অবমাননা নয়, ৫ ধারায় পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ আদালত অবমাননা নয়, ৬ ধারায় অধস্তন আদালতের সভাপতিত্বকারী বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালত অবমাননা নয়, ৭ ধারায় কিছু ক্ষেত্র ছাড়া বিচারকের খাসকামরায় বা রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ আদালত অবমাননা নয় বলে আইনে ব্যাখ্যাসহ বলা হয়েছে। আইনের ৯ ধারায় আদালত অবমাননার পরিধি বিস্তৃত না হওয়া, অর্থাৎ এই আইনে শাস্তিযোগ্য নয় এমন কোনো কাজ আদালত অবমাননা বলে গণ্য হবে না। আইনের ১০ ধারায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কথা বলা হয়েছে। ১০(১) ধারায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রচলিত আইন, বিধিমালা, সরকারি নীতিমালা, পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, স্মারক ইত্যাদি যথাযথভাবে অনুসরণ করে জনস্বার্থে ও সরল বিশ্বাসে কাজ করলে তা আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য হবে না। ১০(২) ধারায় বলা হয়েছে, উপধারা ১-এর অধীনে করা কাজের বিষয়ে আদালতের আদেশ-নির্দেশ যথাযথ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন বা প্রতিপালন করা অসম্ভব হলে এর জন্য আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা যাবে না। আর আইনের ১৩(২) ধারায় বলা হয়েছে, আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তি হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আপিলে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে এবং আদালত তাতে সন্তুষ্ট হলে তাকে ক্ষমা করে দন্ড মাফ বা কমাতে পারবেন। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, আদালত রায়ে বলেছেন, যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে মনে হয় নির্দিষ্ট একটি গ্রুপকে আদালত অবমাননার দায় থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তা করা হয়েছে। আদালত আরও বলেন, সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে যে কোনো নাগরিক আদালতের রায় অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালত শাস্তি দিতে পারেন এবং অনুচ্ছেদ ১১২ অনুসারে রাষ্ট্রের সব কর্তৃপক্ষ, এক্সিকিউটিভ ও বিচার বিভাগীয় ব্যক্তিরা সুপ্রিম কোর্টের কাজে সাহায্য করবে। সংবিধানে ওই নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও আদালত অবমাননা আইনের উল্লিখিত ধারাসমূহের মাধ্যমে সংবিধানের ওই নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া সংবিধানে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং একই প্রতিকার পাওয়ার বিধান থাকলেও ওই ধারাগুলো বিশেষ ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিয়েছে। এসব কারণে আদালত অবমাননা আইনের ওই ধারাগুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক।

রায়ে আদালত বলেন, ২০১৩ সালের আইনে উল্লিখিত মূল ধারাগুলো না থাকলে আইনের অন্য বিষয়গুলো অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়। সে কারণে ‘আদালত অবমাননা আইন, ২০১৩’ সংবিধান পরিপন্থী ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। রায়ে আদালত ‘১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন’ পুনর্বহাল করেন বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

সর্বশেষ খবর