শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
জাতীয় হজ ও ওমরাহ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

হজযাত্রীদের হয়রানি করলেই ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

হজযাত্রীদের হয়রানি করলেই ব্যবস্থা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হজযাত্রীদের সঙ্গে কোনো এজেন্সি প্রতারণা বা হয়রানি করলে সে এজেন্সির বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতেও আল্লাহর ঘরের মেহমানদের যারা হয়রানি করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

গতকাল জাতীয় পর্যায়ে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থা বিষয়ক সম্মেলন-২০২২-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

সম্মেলনটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হাসান, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল-দাহিলান এবং       হাব সভাপতি মো. শাহাদাত হোসাইন তসলিম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যারা আগামীতে হজে যাবেন তারা হজের পাশাপাশি সৌদি আরবের সব নিয়মকানুন এবং আইন সম্পর্কে জানতে পারবেন। আগে হজযাত্রীদের নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল, দালাল-প্রতারকদের প্রতারণা, হজযাত্রী পরিবহনে চরম বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম সাধারণ ঘটনা ছিল। তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরই হজ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে এটিকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। হজযাত্রীর প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, ই-হেলথ প্রোফাইল তৈরি, ই-টিকিট, হজযাত্রী পরিবহন, মক্কা-মদিনায় আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবা দেওয়াসহ সবক্ষেত্রে ই-হজ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এখন অনলাইন সুবিধা ব্যবহার করে প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়া সারা বছর চলমান আছে। এর মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সেবা দেওয়া হচ্ছে- যা আমাদের সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে হজযাত্রীরা সহজেই তাদের যাবতীয় তথ্য ও সেবা নিতে পারছেন। দেশ-বিদেশ থেকে হজযাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারছেন। হজযাত্রীরা তাদের ভিসা, পাসপোর্ট, আবাসন, মেডিকেল সুবিধা, সৌদি আরব গমন, প্রত্যাগমন ইত্যাদি বিষয়ে সহজে সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। তিনি বলেন, হজযাত্রীদের জন্য স্বল্প সময়ে সেবা দেওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুরক্ষা অ্যাপসের সঙ্গে ই-হজ সিস্টেমের আন্তসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে হজযাত্রীদের কভিড-১৯ টিকা সংক্রান্ত তথ্যাদি সহজেই জানা সম্ভব হচ্ছে এবং হজযাত্রীদের ই-হেলথ প্রোফাইল প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সরকারপ্রধান বলেন, হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ ও আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলমানের জন্য ফরজ ইবাদত। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণভাবে ১০ লাখ হজযাত্রী নিয়ে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ পালন করেন। ২০২২ সালে অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হজ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। বর্তমান হজ ব্যবস্থাপনার অধিকাংশ বিষয়ে আইটি নির্ভর হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে হজ ব্যবস্থাপনার অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এসব বিষয়ে হজযাত্রীসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী পাঠানো এজেন্সিকে অবহিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে হজ ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে বহু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কম খরচে হজ পালনের জন্য তিনি হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় করেন এবং বাংলাদেশ থেকে সমুদ্র পথে হজযাত্রী পাঠান। জাতির পিতা মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেন। তার কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন; তাবলিগ জামায়াতের জন্য কাকরাইল মসজিদে জমি দান করেন; টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজযাত্রীদের সুবিধার্থে আমরা ২০১০ সালে জেদ্দা হজ টার্মিনালে প্লাজা ভাড়া করে দিয়েছি। সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা বিমানের হজ পূর্ববর্তী খালি ফ্লাইটে জমজমের পানি ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করেছি। বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে আগের কোটাভিত্তিক ফায়দা ভোগের অনিয়মকে দূর করে বাড়ি ভাড়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিকটবর্তী স্থানে সাশ্রয়ী এবং উন্নত বাড়ি বা হোটেল ভাড়া করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের হজে সৌদি আরবের ‘রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ’ এর আওতায় প্রায় ৬০ হাজার হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন হয়েছে, যা মোট হজযাত্রীর ৪৬ শতাংশ। ২০২২ সালে ৯২ শতাংশ হজযাত্রীর প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন হয়। এর ফলে হজযাত্রীদের হজযাত্রাজনিত কষ্ট বহুলাংশে লাঘব হয়। তিনি বলেন, আগামী বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শতভাগ হজযাত্রীর মক্কা রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় সৌদি পর্বের ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ১৩ নভেম্বর সৌদি সরকারের সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ৬৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প পুনরায় চালু করি। বর্তমানে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২ হাজার ২৭২ কোটি ৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। অন্যান্য সব ধর্মের জন্যও আমাদের সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দেশে সব ধর্মের মানুষ যার যার ধর্ম চর্চা করছে। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি ধর্মকে অপব্যবহার করে এক শ্রেণির ইসলামের লেবাসধারী ব্যক্তি দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে। তারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কখনো তাদের প্রশ্রয় দেবে না। আমরা সবাই ইসলামের মর্মবাণীকে অন্তরে ধারণ করে সমাজ থেকে অন্ধকার, অশিক্ষা, বিভেদ, হানাহানি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করি; ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী শক্তিকে প্রতিরোধ করি।

সর্বশেষ খবর